সমাবর্তন

চিরচেনা ক্যাম্পাসে প্রাণবন্ত সমাবর্তন

প্রকাশ: মার্চ ০৬, ২০২৩

সজিবুর রহমান

দুদিন আগে থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হয় সমাবর্তনের আমেজ। অবশেষে আসে বহুল প্রতীক্ষিত সেই দিন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। অনেকগুলো সেশন ব্যাচের সমন্বয়ে প্রায় চার বছর পরে সমাবর্তন আয়োজন করা হয়েছিল। সমাবর্তনের আগে হলগুলোয় আসতে শুরু করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, ভবন, গাছপালা, টিএসসিসহ সর্বত্র সৌন্দর্যবর্ধক আলোকসজ্জা রঙবেরঙের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। যেন বসন্ত সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাস।          

সমাবর্তনের দিন খুব সকালেই ক্যাম্পাস থেকে শহর এবং শহর থেকে ক্যাম্পাসে লাল-নীল বাসের যাওয়া-আসা শুরু হলো। এসব বাসে চড়ে গ্র্যাজুয়েটরা ফিরছেন চিরচেনা ৩৫ একরের ক্যাম্পাস যবিপ্রবিতে। কেউ স্বামী, কেউ স্ত্রী সন্তান, কেউবা মা-বাবা, আবার অনেকে শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে আসছেন অর্জিত শিক্ষার স্বীকৃতির সাক্ষী করে রাখতে। দেখে মনে হলো বহুদিন পর পরিচিত মুখটি দেখে এক দৌড়ে জড়িয়ে ধরাটা এক টুকরো স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান। আনুষ্ঠানিকতার আগে ক্যাম্পাসজুড়ে প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবী, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সুমধুর মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার এক প্রাণবন্ত চেষ্টা। সে চেষ্টা যেন শেষ হওয়ার নয়।

সমাবর্তনের সভাপতি ছিলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আসতে না পারায় তার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভাপতিত্ব করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। সমবেত কণ্ঠে চার সহস্রাধিক হূদয়ে প্রকম্পিত হয় জাতীয় সংগীত। সমাবর্তনের স্বর্ণপদক অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তির প্রশান্তির পাশাপাশি কতিপয় শিক্ষার্থীর মাঝে ক্ষোভ মনঃক্ষুণ্নতাও দেখা যায়। পুনরায় ভর্তির নিয়মের কাছে হেরে যায় সর্বোচ্চ সিজিপিএ। প্রসঙ্গে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমিক মজুমদার বলেন, আফসোস থাকবে এটাই যে সফলতার স্বীকৃতিটুকু পেলাম না।

সমাবর্তন শেষে চোখে পড়ে গ্র্যাজুয়েটদের একসঙ্গে টুপি ওড়ানো, মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নানা খুনসুটি, হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে ছবি তোলা, রিকশাওয়ালা গ্র্যাজুয়েট, ভুতুড়ে গ্র্যাজুয়েট, অবিবাহিত-বিবাহিত গ্র্যাজুয়েটসহ নানা অভিনয়। এসব গ্র্যাজুয়ট জানান, ক্যাম্পাসে একসঙ্গে চারটি বছর অতিবাহিত করেছি। বহুদিন পর সেসব বন্ধুর সঙ্গে দেখা। আর হয়তো এমন দিন আসবে না। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। কোনো গ্র্যাজুয়েটের স্বামী এসেছেন, সঙ্গে সন্তানও; তাদের খুনসুটিময় মুহূর্তগুলোও ছিল দারুণ। একজন গ্র্যাজুয়েটের স্বামী বলেন, আমার স্ত্রী সমাবর্তন নিচ্ছেন। এমন আনন্দঘন মুহূর্তে ছেলেকে নিয়ে স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে এসেছি।

মোসাব্বির হোসাইন বলেন, সমাবর্তনে অংশগ্রহণ প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের স্বপ্ন। নিঃসন্দেহে সমাবর্তনের দিনটি আমার জীবনের সেরা অধ্যায় হয়ে থাকবে। সমাবর্তনের প্রতিটি মুহূর্তই যেন একেকটি নতুন প্রেরণার জন্মদাতা। সত্যিকার অর্থে এমন উপভোগ্য সময় জীবনে বারবার আসে না। গ্র্যাজুয়েট হয়ে হ্যাট-গাউন পরে সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে শিক্ষাজীবনের পূর্ণতা অনুভূত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সবাই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। কালো গাউন আর গ্র্যাজুয়েট ক্যাপের পেছনে লুকিয়ে থাকে হাজারো স্বপ্ন। তাই মাতৃতুল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ ছিল বাপক উচ্ছ্বাসের। সমাবর্তন শেষে সিনিয়র ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব চলে গেছে। তাদের সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে জানি না। কথা ভেবে খারাপ লাগছে।

ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত পরিবেশবিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী শাহানাজ পারভীন বলেন, সমাবর্তনের সময়টা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। সমাবর্তনের কারণেই পুরনো সব স্মৃতিকে নতুন রূপে খুঁজে পেয়েছি। নতুন রূপে সজ্জিত ক্যাম্পাস দেখে সত্যিই মনটা ভরে গিয়েছিল। ওইদিন সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত ছিল যখন সবার সামনে . দিপু মনি আমাকে মেডেল পরিয়ে দিয়েছিলেন। আনন্দটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আনন্দটা আরো বেড়ে গিয়েছিল, কারণ আমার নিজের শ্রদ্ধেয় সুপারভাইজার ওই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আর দর্শক আসনে ছিলেন আমার বাবা-মা। সত্যি আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫