এনএসইউ ‘ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টার’

বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩

শফিকুল ইসলাম

চাকরির বাজারে ঠিক কী কী দক্ষতা দরকার তা হয়তো একজন শিক্ষার্থী শতভাগ বুঝতে পারেন না। কিন্তু নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সেন্টারের মাধ্যমে তা সহজেই জানতে পারছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুধু কী তাই! কীভাবে নিজেকে তৈরি করবেন সে ব্যাপারেও দেয়া হয় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ। ১৯৯৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় দেশের প্রথম ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টার (সিপিসি)। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ক্যারিয়ার ক্লাব গঠিত হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যারিয়ার সেন্টার চালুর উদ্যোগ এটিই প্রথম। শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত হয় ক্যারিয়ারবিষয়ক সভা, সেমিনার ও কর্মশালা। এসব প্রোগ্রামে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। প্রতি সপ্তাহেই শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানার্জনে সহায়তা করছে এ সেন্টার। স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রেই চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য ক্যারিয়ার নির্দেশিকা এবং তাদের ক্যারিয়ারে সমৃদ্ধি অর্জনের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে এনএসইউর ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টার। এ সেন্টারের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্বের হার এখন শূন্য।

কোনো শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার নিয়ে যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে তাকে কাউন্সেলিং দেয়া হয়। ইন্টারভিউ টিপস, সফট স্কিলস, হার্ড স্কিলস, টেকনিক্যাল স্কিলস সবই শেখেন শিক্ষার্থীরা। শুধু দেশীয় চাকরির বাজারই নয়, পশ্চিমা চাকরির বাজারে কীভাবে নিজেদের জায়গা দখল করে নেবে, সেসব নিয়েও হয় আলাদা প্রশিক্ষণ। শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পেশা এবং চাকরিসংক্রান্ত প্রোগ্রাম আয়োজিত হচ্ছে নিয়মিত। বুট ক্যাম্প, সংশ্লিষ্ট শিল্পবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে করপোরেট সেমিনার, নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট, কর্মশালা, ইন্টার্নশিপ, করপোরেট গ্রুমিং সেশনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্য কাউন্সেলিং, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত অনলাইন সেশন, করপোরেট মিট, করপোরেট লেকচার, পেশাগত উন্নয়নে শিল্প-কারখানা পরিদর্শন, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজের আয়োজন, মক ইন্টারভিউ সেশনের ব্যবস্থা করা, দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং বৃত্তির জন্য কাউন্সেলিংও পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জন্য আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাটের মতো কোর্সও চালু করেছে এ সেন্টার। এক্সেল বুট ক্যাম্প, জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ কোসের্র মতো কয়েকটি পেশাদার দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোর্সও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজে তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারে। অভিজ্ঞ কোর্স প্রশিক্ষক দ্বারা পরিচালিত এ কোর্সগুলো সম্পূর্ণ করার পর সার্টিফিকেট দেয়া হয়। দেশের পাঁচ শতাধিক কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে এ ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব কোম্পানির চাকরির বিজ্ঞপ্তি চলে আসে ক্যারিয়ার সেন্টারের ওয়েবসাইটে। দেশের নামকরা কোম্পানিগুলোর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে জানতে পারেন। অনস্পট ক্যাম্পাস থেকেও নিয়োগ লাভের সুযোগ রয়েছে তাদের। অনেকে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভার্চুয়াল ইন্টার্নশিপ করে সেসব দেশে চাকরি লুফে নিয়েছেন। 

জাইকার অর্থায়নে এনএসইউ ক্যারিয়ার সেন্টারের অধীনে রয়েছে দুটি সেন্টার—‘বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেইনিং সেন্টার’ এবং ‘বাংলাদেশ-মিয়াজাকি এডুকেশনস ট্রেইনিং সেন্টার’। আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেইনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতি বছর শুধু জাপানের চাকরির বাজারে প্রযুক্তি খাতে যাচ্ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে ২০০ শিক্ষার্থী জাপানের এ সেক্টরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জাপানী ভাষা ও বিজনেস ম্যানার শেখানো হয় মিয়াজাকি এডুকেশনস সেন্টারে। দেশেই রয়েছে জাপানি প্রায় ৩০০ কোম্পানি। আর এসব কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এ সেন্টারে। তবে এ সুযোগ কেবল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীকে ক্যারিয়ার সেন্টারের সেবা দেয়া হচ্ছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ খসরু মিয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘‌চাকরির বাজারে কী ধরনের দক্ষতা দরকার সেটি ছাত্ররা জানে না, কিন্তু আমাদের ক্যারিয়ার সেন্টার থেকে গবেষণা করে যুগোপযোগী দক্ষতা সম্পর্কে ধারণার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। আগামী মার্চ মাসে দেশের প্রথম “‍ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন স্কিলস সামিট’’ আয়োজন করা হবে। নভেম্বরে আয়োজিত হবে “‍ন্যাশনাল ক্যারিয়ার ফেয়ার’’। সেখানে পাবলিক-প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রতি বছরই আমরা এ ফেয়ারের আয়োজন করে থাকি। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে দেশের দুই শতাধিক নামিদামি কোম্পানি অংশ নেবে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিকে এ আয়োজনে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫