কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস হয় এমন কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডায়ালাইসিসের জন্য সরকারি হাসপাতালের ফি কিছুটা কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালে তা কয়েক গুণ বেশি। প্রতি ডায়ালাইসিসের জন্য সরকারি হাসপাতালের ফি সাধারণত হাজার টাকার আশপাশে হলেও বেসরকারি হাসপাতালে তা অনেক বেশি। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ফি ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু। পরিবহন ও অন্যান্য ব্যয় যুক্ত হয়ে এ খরচ দাঁড়ায় মোটা অংকে।
কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য দেশে সরকারি সুবিধা অনেকাংশে কম। একই সঙ্গে সেবামূলক ডায়ালাইসিস কেন্দ্রের সংখ্যাও নগণ্য। রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদ-দ্বীন হাসপাতালে সবচেয়ে কম মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া শুরু করেছে। দরিদ্র রোগীদের জন্য স্বল্পমূল্যে এ সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ৭০ জনেরও বেশি দরিদ্র রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে এখানে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জানা যায়, এখানে ডায়ালাইসিস করতে খরচ হয় সর্বনিম্ন ১ হাজার ৪০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ১০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের রোগীদের জন্য এ কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বীমা করার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য বীমার তিনটি ক্যাটাগরি আছে। ডায়ালাইসিস সেশনের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদা
১ হাজার ৪০০, ১ হাজার ৭০০ ও ২ হাজার ১০০ টাকা দিতে হয়। ক্যাটাগরিগুলো করা হয় রোগীর আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বীমা করা হয়। সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ সুবিধা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইরিন জানান, এখানে ডায়ালাইসিস নেয়ার আগে ডাক্তার দেখাতে হয়। ডাক্তার কিছু টেস্ট দেন, সেসব টেস্টের ফলাফল পাওয়ার পরে ফাইল রেডি করে শিডিউল নিতে হবে। বাইরের প্রতিষ্ঠানের টেস্টের ওপর নির্ভর করে এখানে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হয় না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম খরচে ডায়ালাইসিস করা হলেও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তিন দিনে একজন কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিসের জন্য বেশ অর্থ খরচ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা ব্যয় হয় তাদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরিব রোগীরা ডায়ালাইসিসের আওতায় আসে না। এর মূল কারণ খরচ ও ডায়ালাইসিস সুবিধার অপ্রতুলতা।
সরকারের বিশেষ উদ্যোগ পিপিপির মাধ্যমে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ১৩,০০০ সেশন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫০০ সেশন ডায়ালাইসিস করানো হয়, যেখানে রোগীকে দিতে হয় ৫৩৫ টাকা করে। বেসরকারি দাতব্য উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানে এটি সেশনপ্রতি ১ হাজার ৮০০-২ হাজার ৭০০ টাকা আর বেসরকারি বাণিজ্যিক হাসপাতালে খরচ হয় ৩ হাজার ৫০০-৬ হাজার টাকা। হূদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তদের বিশেষ স্লেড ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে সেশনপ্রতি ৪ হাজার ৫০০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ বহন করতে হয় রোগীকে।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২০০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভাগীয় শহরের টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে কিছু মেশিন থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এছাড়া জেলা পর্যায়ের পুরনো মেডিকেল কলেজগুলোতে রয়েছে ডায়ালাইসিসের সুবিধা।