সাক্ষাৎকার

সামিট কনটেম্পোরারি পপ-আপ আর্ট মিউজিয়াম হিসেবে কাজ করে

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩

নাদিয়া সামদানী এমবিই সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা আর্ট সামিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। শিল্পকলায় পৃষ্ঠপোষকতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডারএমবিই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার নাম। চলমান ঢাকা আর্ট সামিটসহ তিনি কথা বলেছেন শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে। সাক্ষাৎকার গ্রহণে রুহিনা ফেরদৌস

এবারের থিম বন্যা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে?

পশ্চিমা বিশ্বে কেউ তার সন্তানের নাম ফ্লাড রাখে না। অথচ আমরা সন্তানের বন্যা নাম রাখি। বর্ষাকে স্বাগত জানাই। আমরা এবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সবার সামনে আনতে চেয়েছি।

সামিটের বিশেষ আয়োজনগুলো সম্পর্কে জানতে চাই

প্রদর্শনী, পারফরম্যান্স আর্ট, ওয়ার্কশপসব মিলিয়ে ঢাকা আর্ট সামিট একটি শিল্পোৎসব। আমরা সবসময় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পীদের গুরুত্ব দিই। বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদের কাজের পাশাপাশি চিত্রকর্ম, পারফরম্যান্স আর্ট, আলোকচিত্র, ইনস্টলেশনধর্মী কাজ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা ওয়ার্কশপের আয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন ব্রাজিল, ফ্রান্স, মেক্সিকো, স্পেন, ইতালিসহ  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা। এবার ঢাকা আর্ট সামিটের আর্কিটেকচারাল কিউরেটর হিসেবে রয়েছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান শন অ্যান্ডারসন। তিনি বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন। যে শিশুরা বন্যাপ্রবণ এলাকায় থাকে, ওই শিশুরা তাদের ফিউচার হোম-কে কীভাবে দেখে কাজটি  তা নিয়ে। জাগো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা এক হাজার শিশুকে ওদের ভবিষ্যৎ ঘর বা ওরা যেমনটা ভাবে তেমন বাড়ির ছবি আঁকার জন্য কাগজ, রঙ পেনসিল পাঠিয়েছিলাম। শিশুরা ছবি এঁকে আমাদের কাছে পাঠায়। সামিটে কাজগুলো রয়েছে। বেলজিয়ামের শিল্পী মিট ওয়ারলব কাজ করেছেন বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে। নারীরাই আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। নারী শ্রমিকরা তাদের তৈরি পোশাকগুলো পরে গ্যালারিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মিট ওয়ারলব পারফরম্যান্স আর্টের মতো করে তা উপস্থাপন করছেন। কাজ রয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের ওপর। শিশুদের নিয়ে আরো একটি প্রকল্প আছে, হোয়ার ডু দি অ্যান্টস গো নামে। ব্রিটিশ শিল্পী অ্যান্টোনি ব্রোমলি, দক্ষিণ আফ্রিকার স্থপতি সুমাইয়া বালি এসেছেন। এবার আমরা পারফরম্যান্সের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের কোনো ভিআইপি আওয়ার নেই। আর প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।

২০১২ থেকে ২০২৩এক দশকের অভিজ্ঞতা অর্জনগুলোকে কী?

আমরা মূলত শিল্প সংগ্রাহক। বিশ্বের বিভিন্ন গ্যালারি, মিউজিয়াম, আর্ট বিয়েনাল দেখতে যাই। বাইরের বিশ্ব বাংলাদেশের শিল্পকলা সম্পর্কে আগ্রহী। আমরা শুরু করার আগে আমাদের শিল্পচর্চাগুলো অনেকটাই দেশের অভ্যন্তরে ঘটত। আন্তর্জাতিক পরিসরে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। আর থাকলেও তা ছিল নির্দিষ্ট কয়েকটি আয়োজন ঘিরে। কারণ আমরা ঠিক জায়গায় যেতে পারিনি। জায়গা থেকেই আমরা উপলব্ধি করি এমন কিছু করার, যার মাধ্যমে বিশ্বকে আমরা আমাদের দরজায় নিয়ে আসতে পারি। বিশ্ব আমাদের শিল্পীদের সম্পর্কে জানবে, তাদের কাজগুলো দেখবে। যখন শুরু করেছিলাম তখন আমরা বুঝিনি ঢাকা আর্ট সামিট এত সফল বড় হবে। এটি আমাদের নিজেদের মডেল। সামিট শেষ হওয়ার পর প্রত্যেকবার আমরা নিজেদের আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে সচেষ্ট থাকি।

ঢাকা আর্ট সামিট সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন দেশের শিল্পচর্চায় কী ধরনের অংশগ্রহণে আগ্রহী?

শিক্ষা-কে আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দিই। সেজন্য বিশ্বের সেরা সেরা চিন্তাবিদ, গবেষককে আমরা সামিটে নিয়ে আসি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্থাপনের ভিত্তিটা রচনা করি। কারণ আমরা মনে করি, শিক্ষার দিকগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি আছে, তবে কনটেম্পোরারি আর্ট মিউজিয়াম বা গ্যালারি নেই। বিদেশে যেমন গ্যালারি মানে তাদের নিজস্ব তালিকাভুক্ত দশজন শিল্পী থাকে, গ্যালারির পক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব নেয়া হয়, দেশে-বিদেশে তাদের কাজ প্রচার করা হয়, তেমনি গ্যালারিগুলো শিল্পীদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। কেননা একজন শিল্পী নিজে নিজে কাজগুলো করতে পারে না। তাই গ্যালারি একজন শিল্পীকে সাংবাদিক, কিউরেটর, আর্ট কালেক্টরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। রেসিডেন্সিতে আবেদনের জন্য তার পোর্টফোলিও তৈরি করবে। বিশ্বের সব জায়গাতেই চর্চা হয়। অথচ আমাদের দেশে শিল্পীকে এককভাবে প্রচেষ্টাগুলো চালিয়ে যেতে হয়। ঢাকা আর্ট সামিট কনটেম্পোরারি পপ আপ আর্ট মিউজিয়াম হিসেবে কাজ করে। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, রেসিডেন্সি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিল্পীদের সমর্থন দেয়। সিলেটে আমাদের আর্ট স্কাল্পচার পার্ক অ্যান্ড আর্ট সেন্টার রয়েছে। বছর পার্কটি আমরা উন্মুক্ত করতে পারব। মুশকিলটা হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগের কাজগুলো সংগ্রহ করা ভীষণ কঠিন। কারণ ১৯৭১ সালের আগের ওই কাজগুলোর বেশির ভাগই এখন পাকিস্তানের শিল্প সংগ্রাহকদের কাছে। কাজগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বড় অংশ। তাই কাজগুলো আমরা শুধু নিজেদের সংগ্রহের জন্য নয়; ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও সংগ্রহ করছি। যেমন শিল্পী ভাস্কর নভেরা আহমেদের একটি দুর্লভ শিল্পকর্ম আমরা সংগ্রহ করেছি পাকিস্তানি শিল্প সমালোচক, ইতিহাসবিদ কিউরেটর জেরিনা হাশমির কাছ থেকে। শিল্পী সম্ভবত ভাস্কর্যটি করেছিলেন ষাটের দশকের দিকে। প্রায় দুই বছর ধরে আলাপ-আলোচনা চালানোর পর তিনি কাজটি আমাদের দিতে সম্মত হন। ধরনের দুর্লভ সংগ্রহের পাশাপাশি সমকালীন কাজগুলো এখানে থাকবে। রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের পাশাপাশি আমাদের সংগৃহীত ভাস্কর্যসহ নানা ধরনের আর্ট ইনস্টলেশন এখানে থাকছে। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশী সমকালীন আর্ট সংগ্রহের পাশাপাশি ইতিহাসনির্ভর কাজের প্রতি দৃষ্টি দেয়। 

শিল্পের বৈশ্বিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশের উপস্থিতি কী বেড়েছে?

বাইরের বিশ্বের মানুষ আমাদের শিল্প, ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে ভীষণ আগ্রহী। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তাদের কাছে আমাদের নিজেদের গল্পগুলো বলতে পারিনি। ঢাকা আর্ট সামিটের মাধ্যমে আমরা সে গল্পগুলো বলছি। সামিটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিউজিয়াম প্রতিনিধি, শিল্প সমালোচক সাংবাদিকরা আসেন। তারা আমাদের দেশের শিল্পীদের কাজগুলোকে নির্বাচন করেন। বাংলাদেশের শিল্পীরা এখন বড় সব ধরনের আর্ট বিয়েনাল যেমনভেনিস বিয়েনাল, ডকুমেন্টাসহ বিভিন্ন আর্ট ফেয়ারে অংশ নিচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল অনেক গ্যালারি এখন বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। বড় বড় মিউজিয়াম বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজ সংগ্রহ করেছে। লন্ডনের টেইট মডার্ন গ্যালারিতে যেমন বাংলাদেশের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নূূপুরের পারফরম্যান্স দেখানো হচ্ছে। গত ঢাকা আর্ট সামিটে নূূপুরের কাজটি করতে আমরা সমর্থন দিয়েছি। টেইট মডার্ন কাজটি কিনে নিয়েছে। তাই বলব, বাংলাদেশ আর উপেক্ষিত নয়, বিশ্বের শিল্প প্লাটফর্মে আজ আমরা সগৌরবে উপস্থিত।

ঢাকা আর্ট সামিটের অর্থায়ন কীভাবে আসে?

শিল্পকলা একাডেমি বিনামূল্যে আমাদের ভেনুগুলো দেয়। আর বাকিটা সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থায়ন। এছাড়া আমাদের কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদার আছেন। তাদের থেকে সমর্থন পাই।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫