বাংলাদেশের ১৮৬ পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব

প্রকাশ: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের পোশাক শিলগু দীর্ঘদিন ক্রয়াদেশ সংকটে ছিল। মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে যখন পুনরুদ্ধার পর্ব শুরু হলো তখন চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা গেলেও তা ছিল খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। কারণ যে সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছিল, ঠিক সে সময়ই দৃশ্যপটে হাজির হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, যার কারণে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিই টালমাটাল হয়ে পড়ে। ফলে আবারো বাংলাদেশের পোশাক খাতে ক্রয়াদেশের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ডলার সংকট জ্বালানি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন শিল্পের উদ্যোক্তারা।

২০১২ ২০১৩ সালে ধারাবাহিক দুই বিপর্যয়ের পর থেকেই পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো নিরাপদ করার উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা গড়ে তোলার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যেও পরিবেশবান্ধব হওয়া থেকে পিছপা হচ্ছেন না তারা। দীর্ঘমেয়াদে শিল্প টেকসই করার লক্ষ্যে একের পর এক কারখানা পরিবেশবান্ধব হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে গ্রিন সনদপ্রাপ্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন পোশাক শিল্প মালিকরা।

পোশাক প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা এলইইডি প্লান্টিনাম কারখানা ছিল ১৩টি। গতকাল পর্যন্ত তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ৪৯টি কারখানা। হিসেবে দেশে এখন লিড প্লাটিনাম কারখানা রয়েছে ৬২টি।

প্লাটিনামের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব হওয়ার প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী রয়েছে আরো তিনটি ভাগ। এগুলো হলো গোল্ড, সিলভার সার্টিফায়েড। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এলইইডি গোল্ড কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০-এ। সিলভার ১০টি শুধু সার্টিফায়েড স্বীকৃত কারখানা চারটি। সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৬।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ একটি পোশাক কারখানার বিনিয়োগের চেয়ে এলইইডি সনদপ্রাপ্ত কারখানায় ২০-৩০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। অনেক উদ্যোক্তাই এলইইডি কারখানা গড়ে তোলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এলইইডি সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যায় না। কাজেই এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না অনেকেই।

তবে বিজিএমইএর সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বিশ্ববাজার এখন অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আগে মানুষ ১০টি পোশাক কিনলে এখন পাঁচটি কিনছে। কিন্তু ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রম অব্যাহত। এমন পরিস্থিতিতেও পরিবেশবান্ধব হওয়ার পথেই রয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অনেক উদ্যোক্তা। কারণেই মন্দাবস্থায়ও ক্রয়াদেশ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

বিজিএমইএ ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বণিক বার্তাকে বলেন, আজ যে কারখানাগুলো সনদপ্রাপ্তির তালিকায় যোগ হয়েছে সেগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। স্বীকৃতি বা সনদপ্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করতে অনেক আগেই প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়েছে। বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রিন কারখানায় বিনিয়োগ উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো বোঝা সৃষ্টি করছে বলে আমি মনে করি না। এটা

ঠিক, বর্তমানে পরিস্থিতি ভালো না। বৈশ্বিকভাবেই ভোগ ব্যয় কম। কবে নাগাদ পরিস্থিতি ঠিক হবে তাও নিশ্চিত না। তার পরেও আমি মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মুহূর্তে বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

মহিউদ্দিন রুবেল আরো বলেন, যারা আগেই উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছেন তাদের কার্যক্রম চলমান রাখতেই হবে। তবে নতুন করে ২০-৩০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সতর্কভাবে করা উচিত। আজকের দিনে কেউ যদি নতুন বিনিয়োগ করতে চান তাকে অনেক চিন্তা করে করতে হবে। এরপর কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদপ্রাপ্তির যোগ্য করে গড়ে তোলার বিষয়টিতেও সতর্কভাবেই এগোতে হবে। কারণ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫