‘একজন দর্শকই পারেন হলে আরো দর্শক আনতে’

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩

সাবিহা জামান শশী

অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল গণ-অর্থায়নে আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত সিনেমা ‘সাঁতাও’। গতকাল ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে খন্দকার সুমন পরিচালিত এ সিনেমা। এর গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপও লিখেছেন খন্দকার সুমন।

সিনেমাটি থেকে অর্থপ্রাপ্তি কম হওয়ার আশঙ্কা থেকে হল মালিকরা সিনেমাটি নিতে চাননি। অবশেষে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে খন্দকার সুমনের সিনেমাটি মুক্তি পেল। গতকাল সরেজমিনে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ব্লকস্টার সিনেমাসে গেলে দেখা যায়, দর্শক সিনেমাটি দেখতে এসেছে। সাঁতাওয়ের নির্মাতা ও কলাকুশলীরাও দর্শকের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখছেন। 

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়ে যায় ‘সাঁতাও’। পুরস্কার পাওয়া এ সিনেমা, হল না পাওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন সুমন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা কর্তৃপক্ষ নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করে সিনেমাটি সম্পর্কে আগ্রহ দেখান। ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাস, রংপুরের শাপলা সিনেমা হল, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিন কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসেন সিনেমাটিকে প্রেক্ষাগৃহে দেখাতে। 

সাঁতাও নিয়ে পরিচালকের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সিনেমাটি মুক্তি পেল। ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শুটিং করেছিলাম আমরা। দুঃখের বিষয়, ২০২০ সালে নভেল করোনাভাইরাস দেখা দেয়ায় সিনেমার মুক্তি থেমে যায়। দেশের অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বপ্ন বুননের মাঝে আছে। সাঁতাও যদি জয়ী হয়, তাহলে তরুণ নির্মাতারাও সিনেমা নির্মাণে আরো সাহস পাবেন। আপনারা হলে এসে সিনেমাটা দেখুন।’

সাঁতাওয়ের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইনুন পুতুল ও ফজলুল হক। এর অন্যান্য চরিত্রে আছেন আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, মো. সালাউদ্দিন, সাবেরা ইয়াসমিন, শ্রাবণী দাস রিমি, তাসমিতা শিমু, কামরুজ্জামানসহ অনেকে। 

গতকাল সিনেমাটি নিয়ে আইনুন পুতুল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দর্শক সাঁতাও ভালোবাসলে, তারা আরো কয়েকটা শো আনতে পারবেন এ সিনেমার। কারণ একজন দর্শকই সিনেমা হলে আরো দর্শক আনতে পারেন। আমরা কেবল সিনেমাটি নির্মাণ করে মুক্তি দিতে পারি। যারা এটি দেখবেন, তারা যখন ইতিবাচক রিভিউ দেবেন, সেটাই আমাদের স্বার্থকতা। দর্শক সাঁতাও দেখতে হলমুখী হবেন। সাঁতাওয়ের প্রথম শোতে বেশকিছু দর্শক হয়েছে। যে দর্শকরা আমাদের সিনেমা দেখতে এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

সাঁতাওয়ের অভিনেতা আব্দুল্লাহ আল সেন্টু দর্শকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের স্বার্থকতা তখন, দর্শক যখন সিনেমাটা দেখতে আসবেন। আমরা অনেক পরিশ্রম করে সিনেমাটা করেছি। চেষ্টা করেছি নিজেদের সেরা কাজটা করতে। কতটুকু পেরেছি, সেটা দর্শক বলবে। দর্শককে বলব, আপনারা হলে এসে সিনেমাটা দেখুন। আশা করি, সাঁতাও দেখে নিজের ভেতরের না বলা একটা গল্প পাবেন।’ 

‘সাঁতাও’ একটি রংপুরি শব্দ। এর প্রচলিত অর্থ মূলত সাতদিন ধরে বৃষ্টি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের চিত্রায়ণের প্রয়াসেই নির্মিত হয়েছে এ সিনেমা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম আর হাসি-আনন্দের মুহূর্তগুলো পর্দায় নির্মাতা ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। এ সিনেমায় মানুষের জীবনের সঙ্গে সংস্কৃতির যোগসূত্র নিপুণভাবেই ধরা পড়েছে। কৃষকের সংগ্রামী জীবন, নারীর মাতৃত্বের সর্বজনীন রূপ এবং সুরেলা জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় আবর্তিত হয়েছে সাঁতাওয়ের কাহিনী। 

নির্মাতা খন্দকার সুমন পরিচালিত প্রথম সিনেমা সাঁতাও গণ অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আমরা যখন সিনেমা নির্মাণের বিষয়টি ঠিক করলাম, তখন বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারকের কাছে যেতে হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে অর্থলগ্নিকারক নির্ধারণ করে দেয় পণ্য কেমন হবে। তাই আমি অর্থলগ্নিকারক থেকে সরে এসেছি। কারণ তাদের নির্ধারণ করে দেয়া যে গল্প দেখাতে হবে, সেটা আমার গল্প নয়। সে মুহূর্তেই স্বাধীনভাবে সিনেমাটা নির্মাণ করার ভাবনা আসে। যেখানে অনেক মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে অথচ এ প্রক্রিয়ায় তারা সিনেমায় কোনো আধিপত্যও বিস্তার করতে পারবেন না। এটা আসলে গণমানুষের চলচ্চিত্র, যেখানে কেবল অর্থ নয়, তাদের অংশগ্রহণও জরুরি। সাঁতাও গণমানুষের চলচ্চিত্র হয়ে উঠল কিনা, সেটা দর্শক হলে এলেই দেখতে পারবেন।’

চলতি বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয় সিনেমা সাঁতাও। এটি দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। গত নভেম্বরের শেষে এশিয়ার অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া (আইএফএফআই) অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের গোয়ায়। ওই উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল সাঁতাও। ভারতের মহারাষ্ট্রে অজন্তা-ইলোরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অষ্টম আসরেও দেখানো হয়েছে এটি। এছাড়া চলতি বছরের নেপাল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও স্থান পেয়েছে খন্দকার সুমনের সাঁতাও। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫