পানির স্তর নেমেছে ৩৫ ফুট

যশোরে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩

আবদুল কাদের, যশোর

যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমানের বাড়ির টিউবওয়েলে ২০ দিন ধরে পানি উঠছে না। পাশের বাড়ির সাবমার্সিবল কল থেকে তিনি প্রতিদিন খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন। পৌরসভার বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা ইমরুল হাসানও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, শুধু নিজেদের টিউবওয়েলেই নয়, পৌরসভার সরবরাহকৃত কলেও পানি পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ সময়ে পানি আসে না। আবার এলেও গতি খুবই কম।

শুধু ওই দুজনের বাড়ির টিউবওয়েলেই নয়, জেলার বেশির ভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে যশোর পৌর এলাকায় চলছে পানির জন্য হাহাকার। শুষ্ক মৌসুম না আসতেই এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শহরের মানুষজন।

যশোরে ভূস্তরের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অস্বাভাবিক নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। এরই মধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েলে পানি উঠছে তার পরিমাণও খুবই কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যেখানে সেখানে পুকুর-খালবিল ভরাট হওয়ার কারণে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।

যশোর বিএডিসির (সেচ) সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, জানুয়ারিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিলে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই জানুয়ারির শেষ দিকে এসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির স্তর নামছে। বর্তমানে পানির স্তর ৩২-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২০২০ ২০২১ সালে ২৫ ফুট ২০২২ সালে ৩১ ফুট নেমেছিল। কারণে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।

যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল রশিদ জানান, কৃষিকাজের সেচের কারণেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এখন চলছে রবি মৌসুম। ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকূপ শ্যালো মেশিনে অপরিকল্পিভাবে পানি ওঠানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সাধারণত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে ২০-২৪ ফুট।

বিএডিসি অফিস (সেচ) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা হাজার ৫৬৭। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। অন্যদিকে শ্যালো টিউবওয়েলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৯৩। এসব শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়।

কর্মকর্তারা জানান, দেশে বোরো ধান চাষে অনেক পানি অপচয় হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি লাগে তিন-সাড়ে তিন হাজার লিটার। উন্নত ধান উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড ভিয়েতনামে এর অর্ধেক পানি খরচ হয়। এসব দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক-দেড় হাজার লিটার। কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পানির অপচয় রোধ করে। বারিড পাইপের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ভিয়েতনামে জমিতে পানি দেয়া হয়। বাংলাদেশে জমিতে নালা কেটে পানি দেয়া হয়। ফলে অর্ধেক পানি মাটি চুষে নেয়। বোরো ধান চাষের কাজে অনেক পানি অপচয়ের ফলে প্রতি বছরে সময় তীব্র খাওয়ার পানির সংকট দেখা দেয়।

শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট রোধ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর অফিস জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারা শহর শহরতলিতে স্বল্পমূল্যে গভীর নলকূপ বসিয়ে খাওয়ার পানি সংকট মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, জেলায় ১৯ হাজার ৭৯৬টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। সদর উপজেলায় রয়েছে হাজার ৬২৫টি। এখন পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে পানি কম উঠছে। আবার অনেক কলে পানি উঠছে না। যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, ওইসব এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে খাওয়ার পানিসহ গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবস্থা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট মোকাবেলা করা হয়। বর্তমানে যশোর পৌর এলাকায় পানির স্তর ৩২-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২৪-২৬ ফুট থাকলে পানি পাওয়া যায়।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, তাদের অধীনে ২৩০টি হস্তচালিত নলকূপ ২৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে। ১৪ হাজার ৭০০ গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার ৩২০ ঘনমিটার। উত্তোলন হচ্ছে ২৫ হাজার ৫৮ ঘনমিটার, যার সবটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে অনেক কলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে বাড়ির কলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির স্তর ৩২-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। কারণে পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে।

ব্যাপারে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছোলজার রহমান জানান, প্রতি বছর অপরিকল্পিতভাবে যে পরিমাণ পানি ওঠানো হচ্ছে, সেই পরিমাণ পানি ভূগর্ভস্থে পৌঁছে না। আবার বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে প্রতি বছর। কারণে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এটা রোধ করা প্রয়োজন। কৃষিকাজে পরিকল্পিতভাবে পানি ব্যবহার করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতির অবনতি হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫