ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র কি মেটাভার্সনির্ভর হবে

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে বা কাজের পরিবেশ কেমন হবে সেটি নির্ধারণে অনেকেই কর্মীদের অফিসে ফিরে আসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মহামারীর আগে যে কর্মপরিবেশ ছিল সেটিতেই পুনরায় ফিরে যেতে হবে, না কি বাসা বা দূরবর্তী জায়গা থেকে কাজ করার যে হাইব্রিড মডেল সেটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, নাকি ইয়েলপ, টুইটার এয়ারবিএনবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসরণের মাধ্যমে রিমোট ওয়ার্কিংকে আদর্শ ধরা হবে? তাও নিশ্চিত নয়।

কর্মক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন কোম্পানি মেটাভার্সে অফিস স্পেস চালুর বিষয়ে ভাবছে। যদিও সমাধান বা পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়টি অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে কর্মীদের যে চাহিদা সেটি পূরণে মেটাভার্সের সক্ষমতা রয়েছে। ২০২২ সালে র্যান্ডস্টাডসের ওয়ার্কমনিটর গবেষণার তথ্যানুযায়ী, কর্মীদের দাবির মধ্যে আরামদায়ক কর্মপরিবেশের বিষয়টি রয়েছে, যার মধ্যে রিমোট ওয়ার্ক অন্যতম।

মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ জানান, মেটাভার্সে কাজ করা থেকে আমরা পাঁচ বছরও দূরে নেই। তার কোম্পানিটি একটি ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে প্রত্যেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে (ভিআর) বাস করবে, যোগাযোগ করবে এবং একসঙ্গে কাজ করবে। খাতের আরেকটি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হলো অ্যাপল। কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্টটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) পছন্দ করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতে থাকলেও কম্পিউটার নির্মিত বিভিন্ন সুবিধা উপভোগ করতে পারে। ব্যবহারকারী যে সংস্করণই সাবস্ক্রাইব করুক না কেন, ২০২৪ সাল নাগাদ মেটাভার্স ৮০ হাজার কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হবে।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, মেটাভার্স হলো ডিজিটাল ইন্টারেক্টিভ ওয়ার্ল্ডের একটি সিরিজ। ভিআর হেডসেট ব্যবহারের মাধ্যমে এতে প্রবেশ করা যায়। এখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের অ্যাভাটার তৈরি করে এবং সেটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

মেটাভার্সে থাকা ওয়ার্কপ্লেস ব্যবহারকারীদের অফিসের পরিবেশ তৈরি করে দেয়। কিন্তু সেটা কর্মীদের বাসা থেকে আরামদায়কভাবে কাজ করার মতো করে উপস্থাপন করা হয়। এমনকি তারা অন্যান্য প্রদেশে থাকা ক্লায়েন্ট সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে পারে।

মহাকাশচারী, পাইলট, আইন প্রয়োগকারী, সার্জন ম্যানুফ্যাকচারিংপ্রশিক্ষণের জন্য ভিআর ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে অন্য ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। স্থায়ী কর্মক্ষেত্র হিসেবে মেটাভার্সকে গ্রহণের জন্য কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে বলে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি পরিচালিত মর্নিং কনসাল্ট জরিপের ফলে দেখা যায়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রযুক্তি কর্মী পেশার বিকাশ প্রশিক্ষণের জন্য ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী। অন্যদিকে পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ভার্চুয়াল মিটিংয়ে ডিজিটাল অ্যাভাটার ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে বলে জানায়।

কভিড-১৯ মহামারীর সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের রিমোট ওয়ার্ক বা বাসা থেকে কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেয়। সংক্রমণ, মহামারীর দুই বছর শেষে যখন সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে, অনেকেই বাসা থেকে বা দূরে থেকে কাজ করাতেই আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং এটিতেই যুক্ত থাকতে চাইছে। সম্প্রতি ম্যাকিনসে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। সেখানে দেখা যায়, আরামদায়কভাবে কাজ করার কথা জিজ্ঞাসা করার পর ৮৭ শতাংশ কর্মী বাসা থেকে বা রিমোট ওয়ার্কিংয়ের সুযোগ নিতে চেয়েছে।

অন্যদিকে র্যান্ডস্টাডসের ওয়ার্কমনিটর প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের ৮৩ শতাংশ স্বাচ্ছন্দ্যকর কাজের সময়কে প্রাধান্য দিয়েছে। অন্যদিকে ৭১ শতাংশ কর্মী আরামদায়ক কাজের পরিবেশ বা অবস্থানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে। সশরীরে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে সেজন্য মেটাভার্স অন্যতম একটি মাধ্যম। কর্মীরা ভিআর হেডসেট ব্যবহারের মাধ্যমে বাসা অফিসে উন্নত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।

মেটাভার্সে করপোরেট অফিস চালুর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ভিআর হেডসেটসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কিনতে যে ব্যয় তা কমানোর সুযোগ নেই। আবার সব কর্মী যে হেডসেট পরবে বা তাদের বাধ্য করা যাবে সেটিও সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ মেটাভার্সে কর্মীরা কীভাবে কাজ করছে বা তাদের আচরণ কেমন তা দেখতে পারবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

অনেকের শঙ্কা, ধরনের কর্মপরিবেশে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে হয়তো রোবোটিক বিপ্লব ঘটবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে। যদিও ভার্চুয়াল জগতে কাজ করার জন্য এখনো বাস্তবের মতো একই স্তরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এসব নেতিবাচক দিক মাথায় রেখে কোম্পানিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে কর্মচারীদের মনোভাব সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি মেটাভার্সে অফিস কেমন হবে সে বিষয়ে জানানোর জন্য প্রতিক্রিয়াও সংগ্রহ করতে হবে। ভিআর পূর্ণ সময় কাজ করার প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রাথমিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এর কারণে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা অনেক কমে যাবে এবং কর্মীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হবে। ফোর্বস অবলম্বনে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫