বিস্বর্গের বাগান
শিল্পী তার অন্তর্দৃষ্টির আলোকে বিশ্বকে বিশ্লেষণ করেন। প্রশ্ন ছুড়ে দেন, প্রশ্ন করেন বিন্যাস হারানো পারিপার্শ্বিকতা, আধুনিকতার দ্বন্দ্ব, মনোজগতের টানাপড়েন ঘিরে। এ সময়, এ চারপাশ, এ বস্তুকেন্দ্রিকতা কোনো পথ তৈরি করে না, অদৃশ্য বৃত্তে বন্দি করে দেয়। কথারা হারিয়ে যায় যত্রতত্র, এলোমেলো। ভেঙে যায় কথোপকথন। বিভক্ত হয়ে পড়ে বাক্যরা। আমাদের চারপাশে যে চতুর বৈশ্বিক বন্দোবস্ত, যে আধুনিকতা, যে গতিশীলতা তা কেবল আমাদের ‘একা’
ও ‘অহং’য়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষ হিসেবে আমরা শুধু ক্ষয়ে যেতে থাকি, হারিয়ে যেতে থাকি অলীক শ্রেষ্ঠত্বের খোলসে। শিল্পী মোস্তফা জামান তার ‘বিস্বর্গের
বাগান’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দর্শকদের অলীক শ্রেষ্ঠত্বের খোলস ত্যাগের আহ্বান জানান।
রাজধানীর শূন্য আর্ট স্পেসের আয়োজনে চলছে এ শিল্পীর অঙ্কন ও আকারায়নে দুটি খণ্ডের প্রদর্শনীর প্রথম পর্ব, যেখানে চায়ের রঙ দিয়ে ছবি আঁকা ও শিল্প নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চেয়েছেন তিনি। কাজ সম্পর্কে শিল্পী মোস্তফা জামান বলেন, ‘মাধ্যম
আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, চায়ের দাগের বদলে আমি রঙ দিয়েও কাজগুলো করতে পারতাম। কিন্তু চেয়েছি সম্পূর্ণ অর্গানিক আদলে কাজগুলো করতে। একটা চাকরি করতাম, কাজটা আমার খুব একটা সহ্য হতো না। তখন খুব ঘন ঘন চা-কফি খেতাম। চা খাওয়ার পর টি-ব্যাগ ফেলে দিতাম। হঠাত্ একদিন মনে হলো, এগুলো ফেলে না দিয়ে কাগজের ওপর ফেলি, তা দিয়ে কিছু একটা করি। বাসায় ফিরে এগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে কাজ করি। প্রদর্শনীতে এ ছবিগুলো রয়েছে।’
এ শিল্পীর কাজগুলো ঘুরেফিরে মনে করিয়ে দেয় আজকের আধুনিক বিশ্বে মানুষ কীভাবে ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। চায়ের দাগ দিয়ে মানুষের মূর্তি ও আকৃতির বেশির ভাগ শিল্পকর্ম খানিকটা ছোট আকৃতির। কারণ শিল্পী তার স্কেচবুক থেকে ছিঁড়ে ফেলা কাগজে কাজগুলো করেছেন। চিত্রকর্মের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে ‘দ্য
জাগলার অমিড দ্য কেওয়াস’ নামে রয়েছে একটি দেয়ালচিত্র। এ সম্পর্কে শিল্পী বলেন, পুুঁজিবাদ হোক কিংবা অন্যকিছু—যেকোনো শাসন ব্যবস্থাই মানুষের প্রতি অবিচার করে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যক্তিকে বুঝতে চায় না, মানুষের সমাজ বুঝতে চায় না। সে জায়গা থেকে এ কাজটি করা। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনা দিয়েই কাজটি করেছি। আমি হয়তো মনে করছি এখানে আমার অবস্থান, আসলে হয়তো আমার অবস্থান এখানে নয়, অন্য কোথাও। আধুনিককালে এ বৈপরীত্য খুব সহজে তৈরি হয়। ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীর প্রথম খণ্ডটি শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় খণ্ড ১৬ থেকে শুরু হয়ে চলবে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
অ/দৃশ্য
রাজধানীর লালমাটিয়ায় অবস্থিত কলাকেন্দ্রে চলছে শিল্পী দিলারা বেগম জলির ‘অ/দৃশ্য’ শিরোনামে ‘দেহের
আখ্যান’ ধারাবাহিকতায় পরিকল্পিত একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এটির কিউরেটিং করেছেন শার্মিলি রহমান। পদ্ধতিগত নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য ও সহিংসতার কবলে থাকা নারী শরীরকে পুনর্বিবেচনায় প্ররোচিত করার প্রয়াস থেকে সাজানো হয়েছে এটি। চিত্রকর্ম, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, স্থাপনা ও সুচিকর্মের স্বতন্ত্র প্রয়োগে শিল্পী ব্যক্তি ও তার সামাজিক পরিসরের সংযোগস্থলে উত্থাপিত প্রাসঙ্গিক বিষয়ভাবনার পুনঃপাঠ করার চেষ্টা করেছে। ৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
রিভার ডেল্টা
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে নদীবিষয়ক গবেষণাভিত্তিক শিল্পকলা প্রদর্শনী ‘রিভার ডেল্টা’। গবেষণাভিত্তিক এ প্রকল্পের প্রথম পর্বের প্রদর্শনীতে ছয়জন শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। জুয়েল এ রবের কিউরেশনে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন অপু রাজবংশী, মহসিন কবির, শিমুল দত্ত, নাজমুন নাহার কেয়া, প্রমথেশ দাস পুলক ও মোহাম্মদ হাসানুর রহমান। প্রদর্শনীটি চলবে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।