ফ্যাশন ডিজাইন

দেশে ফ্যাশন ও টেক্সটাইল নিয়ে গবেষণায় রিসার্চ কাউন্সিল দরকার

প্রকাশ: জানুয়ারি ০৯, ২০২৩

অধ্যাপক . আইয়ুব নবী খানউপ-উপাচার্য, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। সম্প্রতি ফ্যাশন ডিজাইনে পড়াশোনা কর্মক্ষেত্রের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশের ফ্যাশন ডিজাইনারদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই...

ফ্যাশন ডিজাইনে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। এজন্য দেখা যায় বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হয়। বিশেষ করে ফ্যাশন ডিজাইনিং প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য। দেশের শিল্প-কারখানায় বিদেশীরা যে ডিজাইন দেয়, সে অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে দেয়া হয়। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের যে তরুণ সৃজনশীল ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছে, তারা যেন ডিজাইনে নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে পারে এবং বিশ্বে সেগুলো ভালোভাবে ব্র্যান্ডিং করতে পারে। প্রতিটি শিল্প-কারখানার কর্তৃপক্ষ ভাবেন, কীভাবে নতুন নতুন পণ্য ডেভেলপ করা যায়। নিয়মিত যে গার্মেন্ট পণ্য বানানো হয় সেগুলোই উৎপাদন করা হবে, নাকি নতুনত্ব আনা হবে, সেসবও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এজন্য প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে নজর দিতে হবে। ফ্যাশন ডিজাইনেও নতুনত্ব আনতে হবে।

একাডেমিতে ফ্যাশনের কোন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়?

সাসটেইনেবিলিটি একটি বড় ইস্যু। টেক্সটাইল কীভাবে আরো সাসটেইনেবল পরিবেশবান্ধব করা যায়, গ্রিন টেকনোলজি কীভাবে গ্রহণ করা যায়, সেভাবে আমাদের পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে। যাতে করে নতুন গ্র্যাজুয়েটরা জ্ঞানার্জন করে শিল্পে যেতে পারে। এতে করে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের একটা চাহিদাও তৈরি হয়েছে চাকরির বাজারে। শিল্পের সঙ্গে আমাদের কোলাবরেশন রয়েছে। তারা তাদের চাহিদা লোকাল গ্র্যাজুয়েটদের দিয়ে পূরণ করতে চায়, যেন বিদেশীনির্ভরতা শূন্যের কোটায় চলে আসে। আগামীতে ফ্যাশন মার্কেটিং, ফ্যাশন রিটেইলিং, ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং এবং থ্রিডি ডিজাইন কোর্সও চালু করব। আমরা চাই, দেশের শিল্প বিদেশীনির্ভর না থেকে আমাদের দেশের গ্র্যাজুয়েটরাই সে চাহিদা পূরণ করবে। তারা যেন নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে কাজ করতে পারে।

ফ্যাশন ডিজাইনারদের কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

দেশে টেক্সটাইল অন্যান্য শিল্প মিলিয়ে দুই লাখ বিদেশী কাজ করে। উচ্চ পদগুলোয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দেশীয় গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করে। বেশির ভাগই ভারতীয়, শ্রীলংকান পাকিস্তানি। মানুষের চাহিদা বেড়েছে। তারা নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য খুঁজছেন। ডিজাইনে ভিন্নতা চায় মানুষ। নিজস্ব সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে কীভাবে চাহিদা পূরণ করা যায়, সেসব নিয়ে ভাবতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যে নতুন নতুন প্রযুক্তি এসেছে, সেসবের সঙ্গেও পরিচিত হতে হবে। ফার্স্ট ফ্যাশনে যেতে হবে। গার্মেন্টস থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে চায়। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে, ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও সেসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং ব্যবহার জানতে হবে। তাহলেই আমরা টার্গেট অর্জন করতে পারব। গুণগত মানের পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়বে। শুধু শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার, টি-শার্ট, ট্রাউজার এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যাতে টেকনিক্যাল টেক্সটাইল, ম্যান মেইড ফাইবার প্রডাক্টের ওপর জোর দেয়া যায়। তাহলে বেসিক গার্মেন্ট পণ্যের দরদামের ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য গড়ে দেবে। ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শঙ্কায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। রকম বিশ্ব পরিস্থিতিতে ফ্যাশন ডিজাইনে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়ে ফোকাস করা উচিত?

রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেলথ্রি-আর ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রডাক্ট তৈরি করতে হবে, যেটি পরিবেশের ক্ষতি করবে না। এমনকি জুটকেও ফ্যাশনে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এটি কীভাবে সুতার সঙ্গে মিশিয়ে কী ধরনের কাপড় বানানো যায় এবং ফ্যাশনে নিয়ে আসা যায়, তা ভাবতে হবে। ধরনের কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এগুলো নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।

বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের কীভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে?

শিল্প বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোয় নজর দিয়ে সেগুলো পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। যাতে করে আমরা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে না পড়ি এবং নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হয়। এতে দক্ষতা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। তারা রপ্ত করছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি। শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে। শিল্পে কী ধরনের গ্র্যাজুয়েট দরকার সেভাবেই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। শিক্ষকদের বিষয়ে ভালো সক্ষমতা রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়নেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। 

আপনার নিজের যদি কিছু বলার থাকে ...

সারা বিশ্বে গার্মেন্টে পণ্যের চাহিদার শতাংশ পূরণ করে বাংলাদেশ। এখানে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। অল্প কিছু পণ্যের ওপর নির্ভর করে দেশের রফতানি বাজার চলছে। কাজের সুযোগ অনেক। তাই গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে। সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে শিল্পে যারা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে কাজ করে তাদের কিছু প্রণোদনা দেয়া উচিত। এতে তারা কাজে আরো উৎসাহী হবে। আমাদের একটি টেক্সটাইল রিসার্চ কাউন্সিল দরকার। তাহলে ফ্যাশন, টেক্সটাইলের ওপর গবেষণা হবে। আজ হোক বা কাল, এটি চালু করতেই হবে। যেহেতু এটি আমাদের এমন এক খাত যেটি অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করবে। খাতকে যদি আরো সমৃদ্ধ করা যায় তাহলে ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করবে খাতটি। ভারত, পাকিস্তানসহ সব দেশেই টেক্সটাইল রিসার্চ কাউন্সিল রয়েছে। কৃষির মতো খাতেও রিসার্চ কাউন্সিল গড়ে তুলতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫