গুলেন ব্যারি সিনড্রোম

চিকিৎসা ব্যয়বহুল, আছে মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশ: জানুয়ারি ০২, ২০২৩

গুলেন ব্যারি সিনড্রোমকে সংক্ষেপে বলা হয় জিবিএস। এটি একটি মেডিকেল টার্ম। রোগের ফলে শরীরে যে স্নায়ু বা নার্ভ, যেটাকে আমরা বলি রগ অথবা শিরা, সেই স্নায়ুর একটি নির্দিষ্ট অংশের বিরুদ্ধে নিজেরই শরীর একটি প্রতিরোধ তৈরি করে। এর মাধ্যমে শরীরের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ নিজের স্নায়ু নিজের শরীরের দ্বারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাধারণত দেখা যায়, অনেক সময় কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, সেটা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে, ডায়রিয়া অথবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে আবার কাশিও হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ওষুধ, ইনজেকশন অথবা কোনো একটি রোগও জিবিএসের কারণ হতে পারে। ভাইরাসের বিপক্ষে আমাদের শরীরের একটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আছে। রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যখন দেখে, ভাইরাসের মতোই শরীরে আরেকটা বিষয় রয়েছে তখন তাকে ফরেন সাবস্ট্যান্স বা শত্রু মনে করে। তার মানে, শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল ওই প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরবর্তী সময়ে নিজের শরীরের বিরুদ্ধেই ব্যবহূত হয়। তখন স্নায়ুর একটি নির্দিষ্ট অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অনেকভাবে জিবিএস রোগে আক্রান্তরা ক্ষতির শিকার হতে পারে। তবে সহজ কথায় অধিকাংশ রোগী যেভাবে আসে তা হলো চার হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়। অবশ হয়ে যায়, রোগী হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না। অনেক সময় তিন-চার দিনের মাথায় অথবা চার-পাঁচ দিনের মাথায় বিষয়টি যখন বাড়তে থাকে তখন রোগী প্রায় সম্পূর্ণ বিছানাবন্দি হয়ে যায়। কিছু রোগীর শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। যাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হবে তাদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ চিকিৎসার ঝুঁকি থাকে।

একই কারণে যদি কোনো রোগীর চার হাত-পা দুর্বল অথবা প্যারালাইলিস নিয়ে আসে, দুর্বলতা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হয়। এটা এমন না যে কয়েক বছরের মধ্যে চার হাত-পা দুর্বল হয়। সাধারণত কয়েকদিন যেমন দুই থেকে তিনদিন অথবা পাঁচ থেকে ছয়দিন এমন সময়ের মধ্যে রোগীর জটিলতা সৃষ্টি হবে। দুর্বলতা একটি অথবা দুটি হাত, সাধারণত দুই পা দিয়ে শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে তা ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে দুই হাত, দুই পা- দুর্বল হয়ে যায়। অনেক সময় রোগী দুই-তিন দিন পর আমাদের কাছে আসে। শুধু জিবিএসের কারণেই যে চার হাত-পা অল্প সময়ের মধ্যে দুর্বল হয় তা কিন্তু নয়। অনেক রোগের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বিষয়টি অবশ্যই স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা ভালো বুঝতে পারবেন।

রোগী জিবিএসে আক্রান্ত কিনা তা বোঝার উপায় হলো কিছু পরীক্ষা স্নায়ু বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা। প্রথমে আমরা কিছু রক্ত পরীক্ষা করে থাকি। সিবিসির (সামগ্রিক রক্ত পরীক্ষা) মাধ্যমে চিকিৎসক একটি সাধারণ ধারণা পেয়ে থাকেন। রক্তের সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য পরীক্ষা করি। এছাড়া স্নায়ু পরীক্ষা মেরুদণ্ডের রস পরীক্ষা করে জিবিএস নির্ণয় করা হয়। দেখি যে এটা সংক্রামক জাতীয় নাকি কোনো ক্যান্সার জাতীয় সমস্যা। যদি না থাকে তখন কতগুলো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে রোগীর জিবিএস হয়েছে কিনা তার সিদ্ধান্ত দিই।

জিবিএসের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেই চিকিৎসার জন্য প্লাজমাফেরেসিস অথবা শিরায় ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন থেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশী টাকায় দুটি চিকিৎসা দিতে ১০ থেকে ১৩ লাখ টাকা প্রয়োজন পড়ে। আবার অনেক সময় যাদের শ্বাসকষ্ট থাকে, তাদের ক্ষেত্রে আইসিইউতে চিকিৎসা করতে হয়। তার মানে, চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় যে রোগীর জিবিএস হয়েছে তার জন্য বিষয়টি হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশের দুই-একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাজারে ওষুধের সরবরাহ করছে। দেশের দুই-একটি হাসপাতালে সরকারিভাবে এর চিকিৎসা হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে। যদি কখনো সরকার ওষুধ রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করতে পারে তাহলে অবশ্যই রোগীরা ভালো চিকিৎসাসেবা পাবে। জিবিএসে আক্রান্ত রোগীদের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই পরিপূর্ণভাবে আগের জীবনে ফিরে যেতে পারে। -১০ জন মারা যেতে পারে। বাকিরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

 

ডা. মো. শহীদুল্লাহ

অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫