আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

কূটনীতিতে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ তৈরিতে আইআরের সূচনা

প্রকাশ: ডিসেম্বর ১৯, ২০২২

. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। বিষয়ের পড়াশোনা, কর্মসংস্থান সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রথম চালু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৭ সালে বিভাগ চালুর সঙ্গে দেশভাগের প্রেক্ষাপট কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল কি?

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূচনার দিক থেকে দুটি দেশকে বিবেচনায় নেয়া হয়যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারা সেটি মূলত ব্রিটিশ। ঢাবিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চালুর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জাকির হোসেনের ভাই বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ . মাহমুদ হোসেন। ১৯৪৭ সাল আমাদের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশভাগের রাজনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। দেশ স্বাধীন হলে কূটনীতিতে দক্ষ বিশেষজ্ঞ মানুষের প্রয়োজন হবেএমন ভাবনা থেকেই বিভাগ চালু হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্রিটিশ ধারা ডিপ্লোমেটিক হিস্ট্রির (কূটনৈতিক ইতিহাস) ওপর ভিত্তি করেই বিকাশ লাভ করে, ফলে ইতিহাসের শিক্ষকদের হাত ধরেই বিভাগটির সূচনা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বিশেষ করে দেশভাগের পর নতুন পাকিস্তানের কূটনীতিতে দক্ষ বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরি করা।

দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ রয়েছে, যেখানে স্নাতক স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সার্বিকভাবে বিষয়ে পাঠদান শিক্ষার মান নিয়ে আপনার পর্যালোচনা জানতে চাই।

যখন কোনো একটি বিভাগ চালু করা হয়, তার মান নির্ভর করে কী প্রক্রিয়ায় বিভাগটি খোলা হলো। খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়োগ প্রক্রিয়া। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মান যদি রক্ষা করা না হয়, মেধাবীদের বিবেচনায় নেয়া না হয়, শিক্ষকদের যদি ভোটার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে সিলেবাস যত আধুনিক হোক না কেন সে বিভাগের মান ধরে রাখা যায় না। এখনকার প্রেক্ষাপটে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে না। তবে এটা ঠিক যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ চালু হয়েছে, সেগুলোয় শিক্ষকদের সবাই তরুণ। ফলে বিভাগকে আরো এগিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে জনমানুষের সংশ্লেষ গড়ে ওঠা উচিত। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে, তাদের হাত ধরেই মান বিকশিত হবে এবং মান ধরে রাখা যাবে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?

নীতি প্রণয়নের বিষয়টি এককভাবে শুধু রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত নয়। কোনো পাবলিক পলিসি তৈরি করতে হলে দেখতে হয় কোন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতি তাদের কী বাধ্যবাধকতা আছে সে বিষয়টিও। জাতিসংঘ, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, সার্ক বিমসটেকের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্য হওয়ায় রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতার ওপর নির্ভর করে। যার ফলে আমাদের প্রতিদিনের জীবন বিশ্বরাজনীতি দিয়ে প্রভাবিত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ তার বাস্তব উদাহরণ। বিশ্বরাজনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি মিলেমিশে একাকার হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারে দক্ষতা থাকা বা বুঝতে পারা প্রতিদিনের জীবনের জন্য খুবই জরুরি। যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।

স্নাতক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টির পাঠদানে কোন কোন ক্ষেত্র প্রাধান্য পায়?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ মাল্টিডিসিপ্লিনারি। যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় তা খুবই বিস্তৃত বহুমাত্রিকতাসম্পন্ন। এটি দুই ভাগে পড়ানো হয়। ক্রিটিক্যাল প্রবলেম সলভিং পারসপেকটিভ। বিভাগে পড়ানো বিষয়গুলোয় এই দুই পারসপেকটিভের সমন্বয় থাকে। বৈশ্বিক চাহিদার আলোকে সিলেবাস তৈরি করা হয়। পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সংগঠনের রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, বিশ্ব পরিবেশগত রাজনীতি, উন্নয়নসংক্রান্ত রাজনীতি, গভর্ন্যান্স, ইতিহাস, আন্তর্জাতিক আইন, কূটনীতিএসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। জাতিসংঘ স্বীকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে ফ্রেঞ্চ জাপানিজ ভাষা শেখাও বাধ্যতামূলক।

শিক্ষা কর্মসংস্থানের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্রে এটি কতটুকু যৌক্তিক?

এক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা তেমন নেই। কর্মসংস্থান বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দুই ধরনের সুযোগ রয়েছেঅনট্রাক অফট্র্যাক। অনট্রাক হলো যে বিষয়ে পড়াশোনা, সে বিষয় সম্পর্কিত কর্মসংস্থানের সুযোগ। এক্ষেত্রে আইআরের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা, দূতাবাসে কাজের সুযোগ পান। আর অফট্র্যাক হিসেবে রয়েছে ব্যাংকিং, প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্য আরো অনেক খাতে কাজের সুযোগ। যেহেতু শিক্ষার্থীরা বিদেশী ভাষা শেখে তাই পেশাগত কাজেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। আইআরের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে যারা ভাষাশিক্ষা ভালোভাবে আয়ত্ত করেছেন, তাদের অনেকেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনেও কাজ করছেন।

বিদেশী দূতাবাস কনস্যুলেটে কাজের ক্ষেত্রে আইআরের শিক্ষার্থী কতটা এগিয়ে থাকেন

আইআরের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দূতাবাসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। যে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ করা হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ভালো করে।

দেশের আইআর গ্র্যাজুয়েটদের বহির্বিশ্বে কাজের সুযোগ কতটুকু?

বহির্বিশ্বে কাজের জন্য জরুরি হলো নেটওয়ার্কিং। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। ভারতীয়দের সুবিধা হলো তাদের নেটওয়ার্কিং খুব শক্তিশালী। এখানে আমরা পিছিয়ে আছি। আর বড় সংকটের বিষয় হলো ভাষাগত দক্ষতার অভাব। অনেক ভালো শিক্ষার্থীরও ভাষাগত দক্ষতা না থাকায় আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের অবস্থান করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভাষাগত দক্ষতা হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই হয় না। বিদ্যালয় থেকেই তা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি সংকটও অনেক সময় প্রভাব ফেলে। তবে জ্ঞানের দিক থেকে এখানকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই। বিদেশে গিয়ে তারা ভালো করে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫