ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরুটা ২০০৭ সালে। ১৫ বছরের ব্যবধানে অর্জনের ঝুলি ভারী করেছে দুই বাঙালি বিতার্কিকের ‘বিতর্কের বিশ্বকাপ’
জয় থেকে শুরু করে আরো আন্তর্জাতিক অর্জন। ক্লাবে ‘বিতর্কের প্রথম বিশ্বকাপ’
আসে ২০১৩ সালে; ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ‘ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’
ক্যাটাগরিতে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, ১০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নকআউট পর্বে অংশগ্রহণ, পৃথিবীর অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ কেমব্রিজ ইউনিয়ন আয়োজিত কেমব্রিজ ইন্টারভার্সিটি ২০২১ চ্যাম্পিয়ন, অক্সফোর্ড আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট, এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি চ্যাম্পিয়নশিপ, উহুরু ওয়ার্ল্ডস, এডিনবার্গ ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপ, ইন্দো-প্যাসিফিক ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সর্বশেষ সাজিদ ও সৌরদ্বীপের ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২-এর ওপেন ক্যাটাগরিতে ফাইনাল জিতে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা। দেশের কোনো বিতর্ক দলের এ প্রতিযোগিতায় এটাই প্রথম অর্জন। বিতর্ক অঙ্গনে এ সাফল্য নিয়ে এসেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব।
ক্লাবের সভাপতি সিফাতুল আহসান অপূর্ব বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেসব বিতর্ক ক্লাব রয়েছে তার মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ক্লাব অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেড় দশক ধরে অর্জনে, অবদানে সবার শীর্ষে। দেড় দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্লাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এরই মধ্যে তার সক্ষমতা ও সফলতার নিশান তুলে ধরেছে। সে নিশানে হাওয়া দিয়েছে ক্লাবটি আয়োজিত বিভিন্ন জেন্ডার সেনসিটিভ ইভেন্ট ও আগ্রহ উদ্দীপক ইস্যু নিয়ে মুক্ত আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে।’
ইংরেজি বিতর্কে ক্লাবের সদস্যদের আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে বিতার্কিকদের নিয়ে প্রতি বছর আয়োজন হয় অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা। হাতে খড়ি হয় ক্লাবেই। প্রতিটি টুর্নামেন্টের আগে বাছাই পর্বের জন্য আয়োজন করা হয় কর্মশালা। এখানে নতুন করে শেখার সুযোগ পান বিতার্কিকরা। আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ওপেন, ইএফএল, ইএসএল—প্রতি টুর্নামেন্টে তিনটি ক্যাটাগরিতেই আলাদা নির্বাচনের মাধ্যমে পাঠানো হয় প্রতিনিধি দল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম ইংরেজি বিতর্ক শুরু করেছেন এমন একজন আবির হাসান বলেন, ‘ইংরেজি বিতর্কে বিইউডিসির নিয়মিত ওয়ার্কশপগুলো আমাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে। কখনো ভাবিনি এশিয়ার অন্যতম প্রধান আসর ইউনাইটেড এশিয়ান ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারব এবং “ইংলিশ অ্যাজ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ”
ক্যাটাগরিতে কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নিতে পারব।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়ই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিতর্কজগতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় ইংরেজি বিতর্ক ‘ব্র্যাক জেন্ডার্স’
যেখানে প্রতি টিমে একজন নারী সদস্যের জন্য রয়েছে সংরক্ষিত আসন। বিইউডিসির অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা ‘ব্র্যাক মাস্টার্স ইনভাইটেশনালস’। অংশগ্রহণ করেন সারা দেশের সেরা বিতার্কিকরা। এছাড়া আয়োজন করে ‘ব্র্যাক আইসি’
(ইন্টারক্লাব) যা মূলত ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘ব্র্যাক ইন্ট্রা’
প্রতিযোগিতায় বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই বিতার্কিকরা সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ক্লাব মডারেটর প্রভাষক সাহেদ আলম বলেন, ‘মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য বিতর্কের চেয়ে ভালো কোনো চর্চা থাকতে পারে না। বিইউডিসি এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে যেখানে মানুষ চরমপন্থা নয়, যুক্তি ও সহনশীলতাকেই সমাধান হিসেবে বেছে নেবে।’