হ্যাক আর ম্যারাথন মিলে ‘হ্যাকাথন’। এটা এক ধরনের ‘প্রবলেম বেজড প্রোগ্রামিং’
প্রতিযোগিতা। হ্যাকাথনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শুধু গাণিতিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে এ প্রতিযোগিতায় বাস্তব জীবনের নানা সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান খোঁজা হয়। হ্যাকাথনে অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো বৈশ্বিক কিংবা স্থানীয় সমস্যার গভীরতা নির্ণয় করে তার সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান বের করতে হয়।
দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সিএসই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসতে যাচ্ছে ‘কোড সামুরাই-২০২২’
হ্যাকাথনের চূড়ান্ত আসর। এতে দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০টি দল অংশ নিচ্ছে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ধাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৮টি দলের মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্বের দলগুলো নির্বাচন করা হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো এ হ্যাকাথনের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ। এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম ‘কোড সামুরাই’
প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ-জাপান ভেঞ্চার কোম্পানি বিজেআইটিসহ জাপানের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে এ আয়োজনে আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগী দলগুলো নির্ধারিত কিছু বৈশ্বিক ও স্থানীয় সমস্যার সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ পাবে।
আয়োজকরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি শিল্প বিকাশ ও মানুষের জীবনধারার উন্নতিতে দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি (ভিআর) ও রোবোটিকস—এগুলো এখন প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এই হ্যাকাথনের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের আসন্ন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করা, যাতে তারা সমাজে আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এ আয়োজন তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। আর প্রতিযোগিতায় সেরা পারফরম্যান্সকারী দলের জন্য ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের পুরস্কার জিতে নেয়ার আকর্ষণীয় সুযোগ রয়েছে। অন্য সব অংশগ্রহণকারীর জন্য থাকছে বিশেষ স্বীকৃতি। এছাড়া জাপানে ইন্টার্নশিপ এবং মর্যাদাপূর্ণ আইটি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সুযোগ রয়েছে।
২০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ২১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা—টানা ২৪ ঘণ্টা চলবে প্রোগ্রামিংয়ের এ ম্যারাথন। ঢাবির সিএসই বিভাগের ল্যাবে অবস্থান করে দলগুলো প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট খাতের পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে হ্যাকাথনের বিচারক প্যানেল। তাদের পর্যবেক্ষণ ও বিচারে নির্বাচন করা হবে বিজয়ী দল।
হ্যাকাথন আয়োজক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাবির সিএসইর অধ্যাপক ড. উপমা কবির। হ্যাকাথন আয়োজন বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রোগ্রামিং বিষয়ে এ ধরনের আয়োজনের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। এসব আয়োজন শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে আনন্দময় করে তোলে। ‘কোড সামুরাই’
প্রতিযোগিতার একটি বিশেষ দিক হলো—এ আয়োজনে আমরা জাপানের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে আমাদের পাশে পেয়েছি। জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের অংশীজন হওয়ার কারণ হলো, তারা এর মাধ্যমে দক্ষ জনবলের সন্ধান পেতে চায়। তাই এ প্রতিযোগিতায় যারা ভালো করবে, তাদের উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে। সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও একটি বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাবে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী শিক্ষার্থী, বিশেষজ্ঞরা, জাপান-বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎ অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হবে।
এবারের ‘কোড সামুরাই’ অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরপূর্তি উদযাপন করা হবে। আয়োজক দলের সদস্য সচিব ও ঢাবির সিএসইর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘কোড সামুরাই’ আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে রয়েছে বিজেআইটিসহ জাপানের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আমরা জাপানকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হয়। নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের ‘কোড সামুরাই-২০২২’-এ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরপূর্তি উপলক্ষে জমকালো উদযাপন হবে।