আ.লীগের যৌথ সভায় শেখ হাসিনা

যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০৯, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না, এটা আমার পরিষ্কার কথা। প্রত্যাকটা এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জানতে হবে, তারা শান্তিতে থাকতে চায়, নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়? তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা-খুন, মানি লন্ডারিংএদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মানুষের শান্তি বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না। সবাই প্রস্তুত থাকবেন, কোনো মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে। দোকানপাটে সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এভাবে আমার কৃষক-শ্রমিক, আমাদের নেতাকর্মী কারো গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নেই। এরা কীভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। আমাদের যেসব নেতাকর্মী বিএনপির হাতে ছেচা মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না।

দলের নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেই পঁচাত্তর থেকে ২১ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দিতে আসবে সেই হাত আগুনে পোড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এখনো পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখেন চোখের সামনে স্বামী-সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কিসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নাই। অগ্নিসন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না, এটা পরিষ্কার কথা। আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, আওয়ামী লীগ মাটি মানুষের সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের কুর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারো পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত। পকেটের সংগঠন, সেই কারণে তাদের মাটিতে কোনো শিকড় নেই। ওরা আমাদের উত্খাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা হলো স্বর্ণলতার মতো, যে গাছে ওঠে সে গাছ খেয়ে শেষ করে দেয়, এটা হলো বিএনপি। যে গাছের ওপরে স্বর্ণলতা ওঠে সে গাছে আর কোনো ফল ধরে না, বিএনপি দেশের ওপর উঠেছিল, সেই দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আসার পরে দেশের উন্নতি হয়েছে। কারণ উন্নতি করার জন্য একটা মানসিকতা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে। আমরা দেশটাকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। অত্যন্ত সফলভাবে তা করতে পেরেছিও। খুব তো বড় গলায় বলে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া), তারা তাদের কোনো ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? বাস্তবায়ন করতে পারেনি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পরই একেকজন বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার, ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা, ফাহিমা থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের কত নাম বলব, সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নামই প্রকাশ করেনি। ২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯- ক্ষমতায় আসার পর গুনে গুনে তার জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখেও। কিন্তু কই আমরা তা করিনি। আমরা তো তাদের ওপর এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি। বরং ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে তারা আগুনে পুড়িয়ে মারা শুরু করল। এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা, যে হাতে আগুন দেবে, ভিডিও ফুটেজ দেখে সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনোদিন বলিনি কিন্তু এখন বলব, আর মার খাওয়ার সময় নেই।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে: চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। সময় শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশ এবং তারা সে দেশের অধিবাসী। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। এখন তাদের নিজ দেশে চলে যাওয়া উচিত। কেননা তারা এখন খাদ্যনিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের জন্য বিশাল বোঝায় পরিণত হয়ে আছে। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আগামী বছর শুরু হতে পারে বলে বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিষয়ে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউসও উপস্থিত ছিলেন।

শাখাওয়াত মুন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেলে বিনিয়োগ করায় চীনকে ধন্যবাদও জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় মানবতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শান্তি বজায় রাখায় বিশ্বাস করে। তাই বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে তার মেয়াদ সম্পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানান এবং তার পরবর্তী দায়িত্ব পালনে সফলতা কামনা করেন। বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় বিদায়ী দূতকে তিনি ধন্যবাদও জানান। চীনা রাষ্ট্রদূতও সময় বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, একমাত্র আপনার জন্যই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশের উদ্বোধনীতে যোগ দিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় শান্তি চাই। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো একটা যুদ্ধ পরিস্থিতিএকদিকে করোনা মহামারী, আরেকদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যেটা আসলে মানুষকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমি জানি মানুষের যে কষ্ট, মানুষের যে দুঃখ-যন্ত্রণা এবং যুদ্ধের যে ভয়াবহতা সেটা শিল্পীর আঁচড়ে ওঠে আসবে, যাতে ধরনের যুদ্ধ যেন আর না হয়। পৃথিবীর মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে। মানুষের জীবনমানে যাতে উন্নতি হয়, সেটাই আমরা চাই।

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ১১৪টি দেশের ৪৯৩ শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। অংশ নিয়েছিলেন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমার খুব দুঃখ হচ্ছে, আমি নিজে এখানে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। এতজন শিল্পীকে একসঙ্গে দেখব, যদিও এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেখছি। কিন্তু এটাতে তো মন ভরে না। যা হোক, কাজের চাপে সম্ভব হয়নি।

অনুষ্ঠানে গ্র্যান্ড পুরস্কার দেয়া হয় তিন শিল্পীকে। তারা হলেন সুশান্ত কুমার অধিকারী, ইয়াসমিন জাহান নূপুর নেদারল্যান্ডসের হ্যারল্ড স্কলে। এছাড়া সম্মানসূচক পুরস্কার দেয়া হয় আরো ছয় শিল্পীকে। গ্র্যান্ড পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন শিল্পীর প্রত্যেককে লাখ এবং সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্তদের লাখ করে অর্থমূল্য, ক্রেস্ট, স্বর্ণপদক সনদ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫