বিশ্বকাপ মানেই ফুটবল সমর্থকরা দুটি মোটা দাগে বিভক্ত হয়ে যায়—ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আর উন্মাদনার যেন শেষ নেই। বিশ্বকাপে কখনই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল হয়নি। তবু দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা। এক দলের ম্যাচ তো অন্য দলের সমর্থকদের হারের প্রার্থনাও চলে! বিশ্বের জনপ্রিয় দুটি দল যে কাতার বিশ্বকাপেও ফাইনালে মুখোমুখি হবে না, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। এবার তারা মুখোমুখি হতে পারে সেমিফাইনালে। আবার উভয় দলেরই সেমিফাইনালের আগে বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে।
কাতারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সেমিফাইনালের মঞ্চ তৈরি করতে হলে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জিততে হবে নেইমারের ব্রাজিলকে, আর ডাচ বাধা পেরোতে হবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল, সেদিন রাত ১টায় লড়বে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল নিজ নিজ ম্যাচে জিতে গেলেই ১৩ ডিসেম্বর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে স্বপ্নের সেমিফাইনালে লড়বে দুই লাতিন জায়ান্ট, যারা মোট সাতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিল পাঁচবার ও আর্জেন্টিনা দুবার জিতেছে বিশ্ব শিরোপা।
শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে, ব্রাজিল ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়াকে। উভয় দলই গ্রুপ পর্বে একটি করে ম্যাচ হেরেছে। ব্রাজিল হেরেছে ক্যামেরুনের কাছে, আর্জেন্টিনাকে হারায় সৌদি আরব। এরপর দুই দলই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউটে ওঠে। শেষ ষোলোয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জন্য প্রতিপক্ষ হুমকি হয়ে ওঠেনি। তবে এবার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের দুই সফল দল।
গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ব্রাজিল। বিশ্বকাপে দুবার মুখোমুখি হয়েছে তারা। ২০১৪ সালে নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলের জয় তুলে নেয় সেলেসাওরা। তার আগে ২০০৬ সালে তারা জিতেছিল ১-০ গোলে। সব মিলিয়ে চারবারের মুখোমুখিতে ব্রাজিল তিনবার জিতেছে, বাকি ম্যাচটি ড্র হয়। আজ পঞ্চমবারের মতো মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া।
জনসংখ্যার বিচারে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে কোনো লড়াই জমবে না। তবে মাঠে তো লড়বে ১১ জন বনাম ১১ জন। তবু ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ মঙ্গলবার মজার ছলে বলছিলেন, ব্রাজিলের ২০ কোটি মানুষ, আর আমাদের মাত্র ৪০ লাখ। কাজেই আমরা অনেকটা ব্রাজিলের কোনো বড় শহরের শহরতলির মতো।
আবার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা কম জনবহুল দেশের মধ্যে অন্যতম ক্রোয়েশিয়া। তবে ছোট দেশ হলেও বিশ্বকাপে প্রভাব রেখে চলেছে ইউরোপের দেশটি। ১৯৯৮ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নিয়েই তৃতীয় হয় ডেভর সুকারদের ক্রোয়েশিয়া। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসরে তারা রানার্সআপ হওয়ার কৃতিত্ব দেখায়।
কাজেই পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলবে ক্রোয়েশিয়া। দালিচ বলেন, ক্রোয়েশিয়াকে কখনো ছোট করে দেখবেন না। ক্রোয়েশিয়া ছোট একটি জাতি। কিন্তু আমরা সাহসী, প্রতিবাদী ও বিশ্বস্ত। আমরা সবসময়ই নিজেদের সেরাটা দিয়ে থাকি, বিশেষ করে এ প্রজন্মটা।
গত সোমবার জাপানের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে তিন-তিনটি শট সেভ করে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের নায়ক গোলকিপার ডনিমিক লিভাকোভিচ। ক্রোয়েশিয়ার দলনায়ক লুকা মডরিচের শহর জাদার থেকে উঠে এসেছেন লিভাকোভিচ। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ড্যানিয়েল সুবাসিচের ব্যাকআপ গোলকিপার ছিলেন তিনি। এবার দলটির অন্যতম ভরসা ও আস্থার নাম।
এর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপেও দু-দুটি টাইব্রেকারে জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। জাপান ম্যাচের মতো রাশিয়া আসরেও শেষ ষোলো ও শেষ আটের ম্যাচে আগে গোল হজম করে ক্রোয়াটরা এবং পরবর্তী সময়ে সমতা আনার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। টাইব্রেকার নিয়ে দালিচ বলেন, ম্যাচের আগের দিন আমরা পেনাল্টির প্রস্তুতি নিয়েছি এবং লিভাকোভিচ চার-পাঁচটি পেনাল্টি সেভ করে। আমি মনে করি না, এটা ভাগ্যের ব্যাপার। এটা মানসিক দৃঢ়তার ব্যাপার। এটা বৈশিষ্ট্য ও সাহসের ব্যাপার। এটা আমাদের গোটা দলের ইচ্ছাশক্তি, অঙ্গীকার আর বিশ্বাসের কথাই বলে।
এদিকে, বিশ্বকাপে পাঁচটি দ্বৈরথে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস সমান দুটি করে জিতেছে। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে নেদারল্যান্ডস ৪-০ গোলে, ১৯৭৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ২-১ গোলে জয় পায়। এছাড়া ২০০৬ সালে গ্রুপ পর্বে ও ২০১৪ সালে সেমিফাইনালে দুই দলের লড়াই গোলশূন্য ড্র হয়। যদিও ব্রাজিল আসরে টাইব্রেকারে জয় পায় আর্জেন্টিনা।
অরেঞ্জ আর্মিখ্যাত নেদারল্যান্ডস তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছে। ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে ডাচদের হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায় আলবিসেলেস্তেরা।