সোনালী ব্যাংক

খেলাপি ঋণের ৬৭ ভাগই ০.০৮% গ্রাহকের সৃষ্টি

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০৭, ২০২২

জেসমিন মলি

সোনালী ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের ৬৭ শতাংশই তৈরি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য শতাংশ গ্রাহকের মাধ্যমে। অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় উপকমিটির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনের একটি কপি বণিক বার্তার হাতে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকে বড় অংকের (১০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি টাকার) ঋণখেলাপির সংখ্যা মোট খেলাপি গ্রাহকের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য শতাংশ। মোট খেলাপি ঋণের ৬৭ শতাংশই হয়েছে এসব গ্রাহকের কারণে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ব্যাংকটির ছোট অংকের খেলাপি ঋণের (১০ কোটি টাকার কম) হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। কিন্তু এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ ঋণস্থিতির তুলনায় অনেক বেশি। ছোট অংকের ঋণের জামানত সংরক্ষণের হার ১৫০ শতাংশ। যেখানে বড় অংকের ঋণের আদায় হার শতাংশ, সেখানে ছোট অংকের খেলাপি ঋণ আদায় হার দশমিক ৫৯ শতাংশ।

জামানত বেশি থাকা আদায় হার ভালো থাকায় ছোট অংকের খেলাপি ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা বড় অংকের ঋণের তুলনায় বেশি। তার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ আদায় হার আপাতদৃষ্টিতে ভালো দেখালেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপি গ্রাহক-প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটিতে বড় অংকের খেলাপির সংখ্যা ছিল ২৭৩। এসব খেলাপি ঋণস্থিতি ছিল ১১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮টিতে এবং খেলাপি ঋণস্থিতি ছিল ১৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের এপ্রিলে খেলাপির সংখ্যা ৩০৯টিতে পৌঁছায়। ঋণস্থিতি গিয়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকায়।

তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকটিতে বড় অংকের খেলাপির সংখ্যা পরিমাণ বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। সোনালী ব্যাংকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোট ঋণস্থিতি ছিল ৬৫ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে ৭৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা হয়। বছরের এপ্রিলে মোট ঋণস্থিতি আরো বেড়ে ৭৯ হাজার ২১১ কোটি টাকা হয়েছে।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল লাখ ৫০ হাজার। ঋণস্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে লাখ ৭৬ হাজার হলেও ঋণস্থিতি কিছুটা বেড়ে ১৮ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে এসে খেলাপি ঋণস্থিতি সামান্য কমে ১৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং খেলাপির সংখ্যা বেড়ে লাখ ৯৭ হাজার হয়েছে। ২০২০ সালে  ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৭ দশমিক শূন্য শতাংশ, ২০২১ সালে ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বছরে এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

বিষয়ে অনুমিত হিসাব সংসদীয় কমিটির সদস্য সাব কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বণিক বার্তাকে জানান, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হলেও এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। গ্রাহক নির্বাচন থেকে শুরু করে ঋণ বিতরণ, ঋণ আদায় অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ঋণখেলাপি হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ উদঘাটন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এসব কারণ প্রতিকারে প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। সে আলোচনার ভিত্তিতে সাব কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫