মারিনা উলে

প্রেম ও পারফরম্যান্স আর্টের ওডিসি

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০৭, ২০২২

মাহমুদুর রহমান

পারফরম্যান্স আর্টিস্ট মারিনা আব্রামোভিচ উলে চেয়েছিলেন প্রেমকে শিল্পের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে। প্রেমকে উদযাপন করতে তারা তাদের প্রেমের একটি অংশকেই আর্টের মতো করে সাজিয়েছিলেন। একত্রে পারফরম্যান্সের কারণে তাদের পরিচিতি হয়েছিল টু হেডেড বডি হিসেবে। বহু বছর ধরে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করেছেন। এভাবেই নানা জায়গায় তারা পারফর্ম করতেন। ১৯৮৩ সালে তারা তাদের সেরা পারফরম্যান্সটির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন দ্য লাভার্স নামে। একত্রে চীনের প্রাচীর পেরোবেন তারা।

পরিকল্পনাটি ছিল চীনের প্রাচীরের দুদিক থেকে দুজন যাত্রা করবেন। ঠিক মাঝ বরাবর দেখা হবে এবং এখানেই তারা বিয়ে করবেন। দ্য লাভার্স হবে প্রেম পারফরম্যান্স আর্টের যৌথ যাত্রা। তাদের ভাষায় ওডিসি। পারফরম্যান্সের পেছনে তাদের দেয়া তত্ত্ব ছিল এর মধ্য দিয়ে প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকের মানসিক শারীরিক উভয় অংশের তীব্রতা বোঝানো হবে। দুই ভিন্ন দিক থেকে যাত্রা করে একাকী হাঁটলেও তারা প্রত্যেকেই এগিয়ে যাবেন পরস্পরের দিকে।

আয়োজন শুরু করেছিলেন উলে মারিনা। তাবু ক্যাম্পিং স্টোভ থেকে শুরু করে খাওয়ার জন্য তোফুর ব্যবস্থাও করেছিলেন উলে। কিন্তু বেইজিং থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনো পারফরম্যান্স আর্ট ততটা পরিচিত নয়। উলে মারিনার রকম উদ্ভট বিয়েযাত্রা উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিল না চীনা কর্তৃপক্ষ। কেননা আর্ট প্রজেক্ট হিসেবে কখনো তো কেউ চীনের প্রাচীর পেরোয়নি। ফলে অনুমতির বহু আবেদনপত্র বৃথা যেতে থাকে। ফোনকল করতে থাকেন উলে মারিনা। ১৯৮৬ সালে তারা চীনে গিয়েছিলেন প্রাচীর পর্যবেক্ষণ করতে। উলে তখন বলেন, আমি তো স্বপ্নের মাঝেও প্রাচীর ধরে হেঁটে বেড়াই।

১৯৮৮ সালের ৩০ মার্চ বিপরীত দুই প্রান্ত থেকে হাঁটা শুরু করেন দুজন। মারিনার যাত্রা হয় বোহাই সাগরের দিকে ড্রাগন হেড থেকে। যাত্রায় যে গ্রামেই মারিনা থেমেছেন, সেখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে তার। তাদের কাছ থেকে বহু স্থানীয় উপকথা শুনতেন তিনি। ওদিকে উলে যাত্রা করেন গোবি মরুভূমির দিকের ড্রাগন টেইল থেকে। শুরুতে দুজনের মধ্যে দূরত্ব ছিল পাঁচ হাজার কিলোমিটার। প্রতিদিন গড়ে ২০ কিলোমিটার হেঁটে ৯০ দিন পর তারা মুখোমুখি হন। আলিঙ্গন করেন পরস্পরকে। আর তখনই উলে জানান যে তিনি আজীবন হাঁটতে চান মারিনার সঙ্গে। চীনের সংবাদপত্র বিষয়টি উদযাপন করছিল, এমনকি বাজি ফোটানোও হয়েছে। অথচ উলের সঙ্গে মারিনার বিয়ে হয়নি। তাদের দেখাই হয়নি পরবর্তী ২২ বছর!

চীনের প্রাচীরে হাঁটার অনুমতি পাওয়ার পাঁচ বছরে মারিনা উলের জীবন অনেক বদলে যায়। মারিনার কাজ পৌঁছায় আরো বড় পরিসরে। উলেও নিজের মতো কাজ করতে থাকেন। সবমিলিয়ে তারা আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরের দুই দশকে মারিনা নিজেকে এমন স্থানে নিয়ে গিয়েছেন যে তাকে পারফরম্যান্স আর্টের গ্র্যান্ডমাদার উপাধি দেয়া হয়।

২০১০ সালের কথা। নিউইয়র্কে পারফরম্যান্স করছিলেন মারিনা। সেখানে প্রতিদিন ঘণ্টা করে একটি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে থাকতেন আর দুই মিটার দূরে বিপরীত চেয়ারে বসা দর্শনার্থীর সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করতেন। এখানেই উলের সঙ্গে পুনরায় দেখা হয় তার।

রক্তলাল গাউন পরা মারিনা বসে আছেন। তার দুই চোখ বন্ধ। কিছুক্ষণ পরে এক প্রৌঢ় এসে বসলেন। চোখ খুললেন মারিনা। এরপর তার চোখে-মুখে-চিবুকে যা খেলে গেল তা কোনো পারফরম্যান্স নয়, প্রেমের দীর্ঘ যাত্রার স্মৃতি।

মারিনা কাঁদছেন। হাসছেন উলে, তবে কান্না আড়াল করে। গ্যালারিভর্তি দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছে সে দৃশ্য। কয়েক মুহূর্ত, উলের দিকে মারিনা হাত বাড়িয়ে দিলেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫