এসএসসি ও সমমানে গড় পাসের হার ৮৭.৪৪%

এক বছরে জিপিএ ৫ বেড়েছে ৪৭ শতাংশ

প্রকাশ: নভেম্বর ২৯, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে গতকাল। নয়টি সাধারণ, মাদরাসা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে এবার মাধ্যমিকে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। পাসের হার নিম্নগামী হলেও জিপিএ প্রাপ্তির সংখ্যায় বেশ উল্লম্ফন ঘটেছে। বছর বোর্ডগুলোর জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন, যা গতবার ছিল লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০। অর্থাৎ এক শিক্ষাবর্ষের ব্যবধানে পূর্ণ জিপিএপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।

গত শতকের শেষ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশ হতো বিভাগের (ডিভিশন) ভিত্তিতে। চলতি শতকের শুরুতেই এসএসসির ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০০১ সালে প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতিতে এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বছর সারা বাংলাদেশে এসএসসিতে জিপিএ পায় মাত্র ৭৬ জন। এর পর দুই দশকে জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও তারা কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা অর্জন করে সর্বোচ্চ গ্রেড পাচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে বড় ধরনের সন্দেহ রয়েছে। প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক . এসএম হাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, জিপিএ বা সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি যেকোনো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই ইতিবাচক। কারণ একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়ার বিষয়টি তার সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের কথাই জানান দেয়। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জিপিএ কি সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের পরিচয় বহন করছে? এটা একটি বড় প্রশ্ন। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।

বছর হঠাৎ করে জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যার বড় উল্লম্ফন নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, এবার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর তোলার বড় সুযোগ ছিল। বিশেষ করে পরীক্ষায় উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের হাতে অনেক বিকল্প ছিল।

বোর্ডভিত্তিক হিসেবে এবার জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা অঞ্চলে। বোর্ডে জিপিএ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বোর্ডে জিপিএ পেয়েছে ৪২ হাজার ৫১৭ জন। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা যশোর বোর্ডে জিপিএ পেয়েছে ৩০ হাজার ৮৯২ জন। এছাড়া অন্য সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে ২৫ হাজার ৫৮৬, কুমিল্লায় ১৯ হাজার ৯৯৮, চট্টগ্রামে ১৮ হাজার ৬৬৪, বরিশালে ১০ হাজার ৬৮ সিলেটে হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর কারিগরিতে ১৮ হাজার ৬৫৫ মাদরাসা বোর্ডে ১৫ হাজার ৪৫৭ শিক্ষার্থী এবার জিপিএ পেয়েছে।

জিপিএ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সাধারণত এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দুই বছর সময় পায় প্রস্তুতি নিতে। এবারের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রায় আড়াই বছর সময় পেয়েছে। ভালো প্রস্তুতির কারণে জিপিএ -এর সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষার্থীদের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রে অধিক বিকল্প প্রশ্ন রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, এটিও ভালো ফলের একটি বড় কারণ।

পাসের হারের দিক থেকে এবার সবার শীর্ষে যশোর। বোর্ডটিতে বছর ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই জিপিএ পেয়ে পাস করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুমিল্লা বোর্ডে এবার পাসের হার ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থান অর্জনকারী ঢাকা বোর্ডে এবার উত্তীর্ণের হার ৯০ দশমিক শূন্য শতাংশ। এছাড়া অন্য সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে বরিশালে ৮৯ দশমিক ৬১, ময়মনসিংহে ৮৯ দশমিক শূন্য , চট্টগ্রামে ৮৭ দশমিক ৫৩, রাজশাহীতে ৮৫ দশমিক ৮৮, দিনাজপুরে ৮১ দশমিক ১৬ সিলেটে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ পরীক্ষার্থী এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সিলেট অঞ্চলের বন্যাকে ওই অঞ্চলে উত্তীর্ণের হার কমের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যানে এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল অর্জন করেছে। সব শিক্ষা বোর্ড মিলে ছেলেদের তুলনায় পাস করা মেয়ের সংখ্যা হাজার ৫২৭ জন বেশি। সর্বোচ্চ গ্রেডও মেয়েরাই পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। ছেলেদের তুলনায় এবার ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি সংখ্যক নারী শিক্ষার্থী জিপিএ অর্জন করেছে।

এছাড়া এবারের এসএসসিতে হাজার ৯৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। আর কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনিএমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫০টি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫