কাতার বিশ্বকাপে আজ ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে রাজনৈতিকভাবে দুই চিরবৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমীকরণটা সোজা—ইরানকে হারাও, নইলে বাড়ি যাও। ইরান জিতলেই উঠে যাবে শেষ ষোলোয়। যুক্তরাষ্ট্রও জয় পেলে নকআউটে উঠে যাবে। ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের নকআউটে রূপ নেয়া এই ম্যাচটি দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে শুরু হবে রাত ১টায়। একই সময়ে গ্রুপের আরেক ম্যাচে লড়বে দুই ব্রিটিশ দল ইংল্যান্ড আর ওয়েলস। ইংলিশরা এক পয়েন্ট পেলেই নকআউটের টিকিট পাবে, আর ওয়েলসের জিতলেও নকআউটে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সময়কার দলটিকে বলা হয় আমেরিকান ফুটবলের সেরা প্রজন্ম। যদিও বাছাইপর্বে তারা কানাডা ও মেক্সিকোর পেছনে থেকে তৃতীয় হয়। আর এখন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাঁচামরার শেষ ম্যাচের সামনে তারা।
ইরান ম্যাচ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ওয়েস্টন ম্যাককেনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টুর্নামেন্টে আমাদের যাত্রা কতদূর এগোবে তা শেষ ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে আমাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে। কাজেই এখন কাজ হলো, মাঠে নেমে তিন পয়েন্ট তুলে নেয়া।
দুই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র আজ হারলে কিংবা ড্র করলেই বিদায় নেবে। তারা প্রথম ম্যাচে ওয়েলসের সঙ্গে ১-১ গোলে ও পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে।
আমেরিকান মিডফিল্ডার জিও রেইনা ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, আমাদের ম্যাচটি জিততে হবে। আমরা আসলে জয় ভিন্ন কিছু ভাবছি না, ঠিক তিন পয়েন্ট, তাহলেই আমরা নকআউটে উঠে যাব।
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ আসরে যুক্তরাষ্ট্র ফেভারিট হিসেবে খেললেও ইরান ২-১ গোলে তাদের হারিয়ে দেয়। ওই জয়ের পর ইরানি খেলোয়াড়রা দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনা পান। আজকের ম্যাচ সামনে রেখে ইরান সরকারকে ক্রুদ্ধ করে দিয়েছে আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশন। তারা তাদের ওয়েবসাইটে ইসলামিক রিপাবলিক লোগো ছাড়াই ইরানের পতাকা তুলে ধরেছে। এতে দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে, আজ মাঠেও তার ঝাঁঝ থাকবে নিশ্চিতভাবে।
২০১০ সালের বিশ্বকাপের মতোই পরিস্থিতির মুখে যুক্তরাষ্ট্র। সেবার বিদায়ের শঙ্কায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করেন ল্যান্ডন ডনোভান। যোগ করা সময়ে তার গোলেই আলজেরিয়াকে হারায় যুক্তরাষ্ট্র।
কার্লোস কুইরোজের উজ্জীবিত ইরানকে হারানো কঠিনই হবে আমেরিকানদের জন্য। ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও পরের ম্যাচে ওয়েলসকে হারিয়েছে ইরান। দলটির আক্রমণভাগের মূল ভরসা পোর্তোর স্ট্রাইকার মেহদী তারেমি, যিনি এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করেছেন পাঁচ গোল।
ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা ইরান কখনই নকআউট পর্বে ওঠেনি। এবার সেই সুযোগ এসেছে। তবে নকআউটের টিকিট পেতে তাদের জিততে হবে আজ।
গ্রুপের আরেক ম্যাচে আজ টেবিল টপার ইংল্যান্ডের মুখোমুখি তলানির দল ওয়েলস। গ্যারেথ বেলের দল প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করলেও হেরে গেছে ইরানের কাছে। তাতেই বিদায়ের মুখে পড়েছে ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরা এই দলটি।
‘এ’ গ্রুপ থেকে নকআউটের দুই টিকিটের জন্য আজ তিন দলের লড়াই হবে। স্বাগতিক কাতার প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সবার আগে বিদায় নিয়েছে। গ্রুপ থেকে এখন নকআউটে ওঠার দৌড়ে আছে নেদারল্যান্ডস, একুয়েডর ও সেনেগাল। তবে সবার চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ডাচরা। আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে আজ কাতারের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেলেই তারা উঠে যাবে নকআউট পর্বে। জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে।
নেদারল্যান্ডস প্রথম ম্যাচে সেনেগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতারের মাটিতে শুভ সূচনা করে। যদিও পরের ম্যাচে তাদের চরমভাবে হতাশ করে একুয়েডর। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত জয় পাওয়া হয়নি। ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করে লাতিন দল একুয়েডর। আজ দুর্বল কাতারের সামনে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল নেদারল্যান্ডস। স্বাগতিকরা কোনোভাবেই ডাচদের জন্য বাধা হয়ে ওঠার কথা নয়। বর্তমান এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা টানা দুই হারে এরই মধ্যে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। আজ শুধুই গৌরবের জন্য খেলবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি, আর ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট এবং বিশ্বকাপে মোট তিনবারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস খেলবে নকআউট পর্বের টিকিট নিশ্চিত করতে।
আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ জমজমাট লড়াই হতে পারে লাতিন দল একুয়েডর ও আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন সেনেগালের মধ্যে। একুয়েডর ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে ও সেনেগাল তিন পয়েন্ট নিয়ে তিনে অবস্থান করছে। দুটি ম্যাচই শুরু হবে রাত ৯টায়।