বিশ্বকাপের রাজনীতি ও অর্থনীতি

প্রকাশ: নভেম্বর ২৭, ২০২২

বণিক বার্তা অনলাইন

বিশ্বকাপের রাজনৈতিক গুরুত্বকে কাজে লাগিয়েছিলেন ইতালির মুসোলিনি ও আর্জেন্টিনার জেনারেল ভিদেলা। ফ্যাসিস্টদের কথা আলাদা করে বলা হলেও প্রশ্ন থেকেই যায়, শুধু কি তারা?

উৎপত্তির পর থেকেই বিশ্বব্যাপী উৎসবে পরিণত হয়েছে বিশ্বকাপ আসর। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপস্থিতি থাকবে। খেলার সঙ্গে এই সবের মিশেল নিয়ে ভাবতে যারা নারাজ, তাদের জন্য কাতার বিশ্বকাপ চাক্ষুষ প্রমাণ হতে পারে।

আয়োজন নিয়েই বলা যাক। আয়োজক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফিফা এমন দেশকে প্রাধান্য দেয়, যেখানে এর আগে আসর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের কাতার। খুব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া ও চীনের দিনের বেশি দেরি নয়। তবে ইউরোপীয় নেতারা আয়োজক হিসেবে কাতারকে ভোট দিয়েছেন অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনা করে, এমন দাবি করেছেন ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটার। শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় সমালোচনা উঠলেও তাদের মনোযোগ সরেনি। অভিযোগ রয়েছে, কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হতে উৎকোচ ব্যবহার করেছে, যদিও তা প্রমাণ হয়নি। 

আসরের শুরুতেই কাতার কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রকাশ্যে অ্যালকোহল বিক্রি ও মদ্যপানের ওপর। এমনকি এলজিবিটিকিউ ইস্যুতেও শক্তভাবে বিরোধী অবস্থান নেয়। এজন্য নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি সামনে এনেছে কাতার সরকার। তবে পশ্চিমারা মেতেছে সমালোচনায়। সবিশেষ খোদ ফিফা প্রেসিডেন্টকে মুখ খুলতে হয়। ইউরোপের অভিবাসী পরিস্থিতির ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ধিক্কার দেন জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

আসর শুরুর পরও বন্ধ হয়নি বাদ-প্রতিবাদ। এলজিবিটিকিউ সমর্থনে ‘ওয়ানলাভ আর্মব্যান্ড’ পরার পরিকল্পনার আসে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ থেকে। কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার কড়া হুশিয়ারি দেয়। আর্মব্যান্ড না পরলেও জাপানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরুতে জার্মানি মুখ ঢেকে প্রতিবাদ জানায়।

মাশা আমিনি ও হিজাব ইস্যুতে সাম্প্রতিক ইরানে বেশ উত্তপ্ত। সেই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়ে ইরানের ফুটবল দল জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া থেকে বিরত থেকেছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার সঙ্গে জয় পেয়েছে সৌদি আরব। আর সেই জয় যেন আরবদের জয় হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে পাকিস্তান, কাতার, মিসর ও আফগানিস্তানের সরকার। সৌদি আরব বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার জন্য ফিফা বোর্ডে যোগাযোগ শুরু করেছে এর মধ্যে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি পুনর্গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপ শীতকালে হবে নাকি গ্রীষ্মকালে, এই সিদ্ধান্ত মূলত অর্থনৈতিক। কারণ ক্লাবগুলোর খেলা বিবেচনায় রাখতে হয় ফিফা ও প্রচারমাধ্যমকে। ফক্স স্পোর্টস প্রথম থেকেই বিশ্বকাপ প্রচারসত্ত্ব কিনে নেয়। তারাও পালন করে সিদ্ধান্তদাতার ভূমিকা। ২০১৮ সালে ফিফা প্রচারসত্ত্ব বিক্রি করে ১১০ কোটি ডলারে। যেখানে ফক্স প্রদান করে ৪৫ কোটি ডলার। অন্যদিকে এনবিসি ইউনিভার্সালের প্রতিষ্ঠান তেলেমুন্ডো বিক্রি স্পেনিশ ভাষায় প্রচারসত্ত্ব কিনে নেয় ৬০ কোটি ডলার দিয়ে।

এতকিছুর পরও বিশ্বকাপ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে পরস্পরকে বুঝার। আরববিশ্বও তুলে ধরেছে তাদের সংস্কৃতি। বিশ্বব্যাপী মন্দার সময়ে ইতিবাচকতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ। তা কতটুকু সত্য, সেটা আগামী বছরগুলোতে দৃশ্যমান হবে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫