বান্দরবানে ফাটল ধরা গার্ডার রেখেই চলছে সেতু সংস্কার

প্রকাশ: নভেম্বর ২৪, ২০২২

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বান্দরবান

বান্দরবানে মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি ব্রিজের পুরনো গার্ডার না ভেঙেই মেরামতকাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের সুলতানপুরে সুয়ালক খালের ওপর পুরনো একটি ব্রিজে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী নিজে না করে কাজটি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। কাজ ক্রয়ের কথা স্বীকার করলেও কত টাকায় কাজটি কিনেছেন তা জানায়নি তৃতীয় পক্ষ। তবে শিডিউল অনুযায়ী কাজ চলছে বলে দাবি বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর।

স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ আগে সুলতানপুরের সুয়ালক খালের ওপর একটি পুরনো ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু হয়। ব্রিজটির একটি স্ল্যাব ওপরের রেলিং ভাঙা হয়। ব্রিজের অন্য দুটি স্ল্যাবের ওপর শ্রমিকরা ঘেরা দিয়ে বাস করেন। সে সময় দেখা মেলে স্ল্যাবের নিচে থাকা দুই পাশের গার্ডারে ব্যবহূত রডগুলোয় জং ধরে ক্ষয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে গার্ডারগুলোতেও বিভিন্ন স্থানে ফাটল রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন জং ধরা রডের ফাটল ধরা গার্ডার না ভেঙে তার ওপর নতুন স্ল্যাব ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধতে থাকেন। অবস্থায় ফাটল ধরা গার্ডার ভেঙে নতুন গার্ডার করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়। কিন্তু কেউ কর্ণপাত না করে বরং জং ধরে অকেজো রডের ফাটল ধরা গার্ডারের ওপর রড বাঁধাইয়ের কাজ করতে থাকেন।

এছাড়া মেরামতকাজ শুরুর আগে ব্রিজটির পাশ দিয়ে খালের ওপর একটি কাঠের সাঁকো বানিয়ে বিকল্প চলাচলের পথ করে দেয়া হয়। কিন্তু বিকল্প পথ দিয়ে শুধু ব্যাটারিচালিত টমটম ছাড়া অন্য কোনো যাত্রী পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ব্রিজটির তিনটি স্ল্যাবের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত একটি স্ল্যাবসহ গার্ডার বা বিম সম্পূর্ণ ব্রিজের  রেলিং ভেঙে মেরামতকাজের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। গ্রামীণ সড়ক মেরামত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মেরামতকাজটি পেয়েছে মেসার্স নিশান ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী খসরু নামের এক ব্যক্তি। কাজে চুক্তিমূল্য ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকার কিছু বেশি। কাজের ব্যয় বাবদ মাঝারি আকারের যাত্রী পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য বিকল্প অস্থায়ী সড়কসহ নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার জন্য লেবার শেডও ধরা রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছেন কাইছার নামের এক যুবক। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিশান ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। অক্টোবরের ২৭ তারিখ কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, ব্রিজটির একটি স্ল্যাবের ভাঙা অংশে পুরনো গার্ডারের ওপর রড বাঁধাই করা হয়েছে। দুটি গার্ডারের রডগুলোই জং ধরা এবং গার্ডারগুলোর বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ফাটল। ব্রিজের পাশেই ছোট একটি কাঠের সাঁকো এবং ব্রিজের ওপর একটি লেবার শেডের দেখা মিলেছে।

সময় কথা হলে শ্রমিকরা জানান, ১৪-১৫ দিন আগে কাজ শুরু হয়েছে। জনবল পর্যাপ্ত নয়। স্ল্যাব ঢালাইয়ের জন্য বড় বাধা শেষ। অনুমতি পেলে ঢালাই শুরু করা হবে। পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে করলে গার্ডার ভাঙা থেকে ঢালাই পর্যন্ত ২২-২৫ দিন সময় লাগবে।

কাজটি খসরু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে করছেন বলে স্বীকার করেছেন বাস্তবায়নকারী মো. কাইছার। কত টাকা দিয়ে কিনেছেন তা না জানিয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এটি প্রায় ১১ লাখ টাকার কাজ। টেন্ডারের প্রাক্কলনে স্ল্যাব রেলিংয়ের বিষয় উল্লেখ আছে। গার্ডার ভাঙার কথা ছিল না। এখন গার্ডার যদি ভাঙতে হয় অফিস থেকে অনুমতি নিতে হবে। কার্যাদেশের মেয়াদ আছে কিনা জানতে চাইলে গার্ডারে জং ধরেছে বলে জানান তিনি।

বান্দরবান সদর উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আমান জানান, ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ আদায় করা হবে। মেরামত করা স্ল্যাবটির দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার প্রস্থ ১৬ ফুট। ঠিকাদার নতুন, এজন্য প্রাক্কলন বোঝেন না। তবে প্রাক্কলনে যেভাবে ধরা আছে, সেভাবে কাজ করানো হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, শিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেন এলজিইডির বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল ইসলাম মজুমদার। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমি ভিজিট করেছিলাম সুলতানপুরে। এখন গার্ডারসহ ভেঙে আমরা নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করব।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫