রেমিট্যান্স এখন হোম ডেলিভারি প্রডাক্ট

প্রকাশ: নভেম্বর ১৬, ২০২২

সারা দেশে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ছয় হাজারের বেশি এজেন্ট আউটলেট আছে। দেশের এমন কোনো হাটবাজার নেই যেখানে আমাদের আউটলেট পাওয়া যাবে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একেবারে দোরগোড়ায় ডাচ্-বাংলার ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার জন্য আমরা বিশ্বের স্বনামধন্য ৭৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বেশিসংখ্যক মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তির দিক থেকে ডাচ্-বাংলার অবস্থান দ্বিতীয়। কারণে প্রবাসীরা স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আমাদের অনেক এজেন্ট রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছে দিতে প্রবাসীদের ঘরে চলে যাচ্ছেন। কারণে রেমিট্যান্স এখন হোম ডেলিভারি প্রডাক্টে রূপান্তর হয়েছে। ঘরে বসেই প্রবাসী পরিবার স্বজনের পাঠানো অর্থ বুঝে পাচ্ছে। অথচ একসময় রেমিট্যান্সের অর্থ আনার জন্য প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা ৩০-৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যেতেন। এতে যাতায়াত ব্যয় থেকে শুরু করে টাকা নিয়ে নিরাপদে ঘরে ফেরার ক্ষেত্রেও শঙ্কা থাকত।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টদের মাধ্যমে ২৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আসা রেমিট্যান্সের ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এজেন্টরা দেশে লাখ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স এনেছেন। নতুন ধারার ব্যাংকিংয়ের সাফল্যে ডাচ্-বাংলা গর্বিত অংশীদার। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে এটি আমার জন্যও গৌরবের। বিপুল সাফল্যের জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সব এজেন্টকে সাধুবাদ জানাই।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো এক ধরনের আউট সোর্সিং সেবা। আমরা ব্যাংকে একজন কর্মী নিয়োগ দেয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। নিয়োগ দেয়া কর্মীদের মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তার পরও ব্যাংকিং করতে গিয়ে ভুল হয়ে যায়। অথচ এজেন্টদের কেউ মুদি দোকানি, কেউ গ্রামের ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ব্যাংকের মূল স্রোতধারা থেকেও এজেন্টরা অনেক দূরে। তার পরও বিশ্বাস করে ব্যাংকগুলো অপরিচিত একজন ব্যক্তিকে নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। দেশের মোট এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের এক-চতুর্থাংশ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের। আমাদের এজেন্টরা ৫১ লাখের বেশি ব্যাংক হিসাব খুলেছেন, যা এজেন্টদের মাধ্যমে খোলা মোট ব্যাংকিং হিসাবের প্রায় ৩১ শতাংশ।

আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং হয়, শুরুর দিকে এটি বিশ্বাস করতে আমারও কষ্ট হচ্ছিল। আমার ধারণা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিংয়ের অনুমতিও দেবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের ব্যাংক খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষিত, চৌকস, ভদ্র আর্থিক সচ্ছলতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের এজেন্টদের নিজ নিজ এলাকার জনগণের কাছেও জনপ্রিয়তা রয়েছে। কারণে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তারা সফল হয়েছেন। এজেন্টদের সাফল্য ব্যাংকের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। তাদের মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার আমানত পেয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করতে টাকা ব্যয় হলে এজেন্টদের মাধ্যমে হচ্ছে কেবল টাকা। ফলে ব্যাংকের কস্ট অব ডিপোজিট কমে এসেছে। ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এজেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এরই মধ্যে ৫২০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে এজেন্টদের মাধ্যমে। আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে আরো বেশি ঋণ পৌঁছাতে চাই। লক্ষ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য কিছু নতুন প্রডাক্ট সাজিয়েছি। এজেন্টদের মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এসএমই রিটেইল খাতের ঋণ সম্প্রসারণ করতে চায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে এসএমই ঋণ পৌঁছানো সম্ভব হলে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারবেন। দেশের গ্রামাঞ্চলে কুটির ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠলে নারীদের পাশাপাশি বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এজেন্টরা যাতে উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন, আমরা সে উদ্যোগই নিচ্ছি।

এজেন্টরা সৎ, দক্ষ যোগ্য হিসেবে গড়ে না উঠলে ধারার ব্যাংকিংয়ের প্রকৃত সাফল্য আসবে না। এজন্য আমরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজন্টদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিচ্ছি। তারা যাতে কোনো ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে না যান, সেটিও তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। আশা করছি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নিয়োগকৃত এজেন্টরা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারবেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫