চাপ ও প্রতিযোগিতামুক্ত শিক্ষা

জাপানের কুমন পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশেও

প্রকাশ: নভেম্বর ১৪, ২০২২

ফিচার প্রতিবেদক

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা বা নতুন কিছু শেখা। কিন্তু আমাদের দেশের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র, শিক্ষক অভিভাবক সবার মূল লক্ষ্য থাকে ভালো ফলাফল করা। রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির পদ্ধতিগত কারণে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত পৌঁছতে ফলাফলের যথেষ্ট গুরুত্বও রয়েছে। তাই দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী রোজ স্কুলে যায় পরীক্ষায় ভালো ফল করবে বলে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই কাঁধে ১২ বিষয়ের বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার অর্থ বুঝে ওঠার আগেই ভালো ফলাফলের জন্য শুরু হয় শিক্ষক-অভিভাবকের দ্বৈত মানসিক চাপ।

দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে জাপানে উদ্ভাবিত কুমন পদ্ধতি। ১৯৫৮ সালে নিজ সন্তানের ওপর প্রয়োগের মাধ্যমে পদ্ধতি চালু করেন জাপানের এক শিক্ষক। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতা মানসিক চাপমুক্ত শিক্ষার চর্চা। বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে কুমন শিক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে সম্প্রতি পদ্ধতির চর্চা বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক কুমন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের গবেষণা পরিকল্পনা সদস্য কানো কৈছি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঢাকায় শুরু করেছি। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সব শহরে কুমনের সেন্টার খুলতে চাই। পদ্ধতি কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়নি। কুমন ইনস্টিটিউট চায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুক্কায়িত গণিত ভাষাশিক্ষার ভীতি দূর করে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষার পথকে সুন্দর করতে, যা তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। জাপানের কুমনের চিন্তার সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবেশ অনেক অনুকূলে। আমরা দেখেছি এখানকার শিক্ষার্থীরা অন্য অনেক দেশের তুলনায় মেধাবী। সরকারের সহায়তা পেলে আমরা কুমন শিক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই।

গণিত ইংরেজি ভীতি দূর করতে জাপানি গণিত শিক্ষক তরু কুমন ১৯৫৮ সালে সহজে গণিত ভাষাশিক্ষার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা কুমন পদ্ধতি নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। প্রথমে জাপানে চালু হলেও বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর ৬০টি দেশে ১৪ হাজার ৫০০ স্কুলে কুমন শিক্ষা পদ্ধতি চর্চা করা হয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ২০১৭ সালে জাপানের কুমন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষা পদ্ধতি চালু করে।

সিদ্ধেশ্বরী সেন্টার ইনচার্জ আশরাফুন্নেসা আঁচল বলেন, আমি মূলত একজন অভিভাবক হিসেবে কুমন সম্পর্কে জানতে পারি। আমার সন্তান কুমনে যেতে শুরু করলে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়। এরপর ব্র্যাকের সহযোগিতায় আমি একটি সেন্টার খুলেছি। এখানে প্রথমেই শেখানো হয় যে ক্লাসে প্রথম হওয়া বা প্লাস পাওয়া জরুরি নয়। কুমনের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুরা প্রথম থেকেই এমন কিছু শিখবে, যা তার জীবনে প্রয়োগ করবে। শিক্ষা জীবনের শুরুতেই শিশুকে বিশ্লেষণী ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়।

ব্র্যাক কুমনের প্রধান নেহাল বিন হাসান বলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফটার স্কুল প্রোগ্রাম। বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ৫৯তম দেশ হিসেবে এটি চালু হয়েছে। ৪৩ লাখ শিক্ষার্থী কুমন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। জাপানের শিক্ষক তরু কুমন শিক্ষায় দুর্বল নিজ সন্তানকে আত্মবিশ্লেষণ থেকে পদ্ধতিতে পড়াতেন, যা পরবর্তী সময়ে বিশ্বে কুমন পদ্ধতি নামে পরিচিতি লাভ করে। আমরা মূলত ব্র্যাকের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ১০০ স্কুলে এটি চালু করি। তখন তাদের মধ্যে ভালো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তাই আমরা চিন্তা করি, এটি পুরো দেশে ছড়িয়ে দিলে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক একটি পরিবর্তন আসতে পারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫