রোবটিকসের বহুমাত্রিক ব্যবহার

প্রকাশ: নভেম্বর ০৭, ২০২২

ফিচার প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী বেড়েছে রোবটের ব্যবহার। মহাকাশ কিংবা গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনীর অভিযান, শিল্প-কারখানা, খাদ্য উৎপাদন প্যাকেজিং, ফার্নিচার শিল্প, মেডিকেল সার্জারি, অটোমোবাইল সেলফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, কৃষিকাজসহ রেস্টুরেন্টের ওয়েটার এমনকি বিনোদন জগতেও রোবটের জয়জয়কার। রোবটের ব্যবহার এখন বহুমাত্রিক। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের গার্মেন্ট শিল্প, ফার্নিচার, খাদ্য উৎপাদন, কৃষিসহ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে রোবট।

শিল্প-কারখানা: উৎপাদন শিল্পে এমন সাধারণ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোর যেমন কাটিং, পেইন্টিং, ওয়েল্ডিং, অ্যাসেম্বেলি প্যাকেজিং ইত্যাদির জন্য এখন আর মানুষের প্রয়োজন হয় না। রোবটই করছে এসব কাজ। এসব শিল্পে রোবটিকসের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। পোশাক শিল্পের বিভিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, কাঁচামাল সংগ্রহ প্রক্রিয়াকরণে এর রোবট অটোমেশন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ালটন ইলেকট্রনিকস কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে রোবট। বিশ্বব্যাপী তিন মিলিয়নেরও বেশি শিল্প রোবট চালু আছে যা ইলেকট্রনিকস এবং গার্মেন্টস শিল্পে চালু আছে। ফেরারি, বিএমডব্লিউ, রোলস রয়েস, হুন্দাইসহ সব অটোমোবাইল শিল্পে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি তৈরি করছে রোবট।

গ্রাহক পরিষেবায় : ডিজিটাল বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটিকসের মাধ্যমে অটোমেশন হয়েছে। রেস্তোরাঁর দরজা খোলার জন্য রোবটের ব্যবহার আজকাল বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঘটনা। ২০১৭ সালে ঢাকার আসাদ গেটে চালু হয় দেশের প্রথম রোবট রেস্টুরেন্ট। যেখানে দুটি মানবাকৃতির রোবট খাবার নিয়ে হাজির হয় টেবিলের সামনে। গবেষকরা আশা করছেন অদূর ভবিষ্যতে টেবিল ওয়েটার হিসেবে রোবট থাকবে। বিভিন্ন ওয়েবভিত্তিক সেবা বা -কমার্স সাইটেও চ্যাটবট রোবটের ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবা চালু হয়েছে আরো অনেক আগেই। সিঙ্গাপুরের একটি হিউম্যানয়েড রোবট যেটি আগের সাক্ষাৎ থেকেই মানুষ শনাক্ত করতে পারে, হ্যান্ডশেক করতে পারে এবং আগের আলাপের ওপর ভিত্তি করে কথা চালিয়ে যেতে পারে।

কৃষিকাজ: কৃষিতে বর্তমানে এমন অনেক যান্ত্রিক রোবটের ব্যবহার হচ্ছে যা কৃষকের সময় এবং অর্থ উভয়ই বাঁচাবে। বীজ বপন, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, পোকা শনাক্ত, ফসল কাটা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট, চায়না, কোরিয়াসহ অনেক উন্নত দেশই ব্যবহার করছে রোবট ড্রোন। দেশেও হচ্ছে এর ব্যবহার। পোলট্রি মুরগি ডিমে রোবটিক ভ্যাকসিন, মৎস্য খামারে, পুকুরের মাছের পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার দিতে রোবটিকস ডিভাইস ব্যবহার হচ্ছে।

স্বাস্থ্য পরিচর্যায় : রোবট স্বাস্থ্যসেবায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। ডাক্তারদের সুনির্দিষ্ট অপারেশনে সাহায্য করতে পারে। কৃত্রিম অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার রোগীদের থেরাপি প্রদান করতে পারে। এর একটি উদাহরণ হলো দা ভিঞ্চি রোবট যেটি হার্ট, মাথা, ঘাড় এবং অন্যান্য সংবেদনশীল অঙ্গের অস্ত্রোপচারে সহায়তা করতে পারে। দেশে স্বাস্থ্য পরিচর্যায় ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার শুরু না হলেও বিভিন্ন থেরাপি এবং বডি ম্যাসাজ করতে ব্যবহার হচ্ছে রোবটের। বাংলাদেশে আজকাল সার্জারির বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ওপেন হার্ট সার্জারি আজকাল একটি ছোট রোবট দিয়ে করা হয়। এন্ডোস্কোপি বা কোলনোস্কোপি শরীরের ভেতর থেকে ছবি নিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে ইসিজি বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এক্স-রের মতো পরীক্ষায় রোবট ব্যবহার করা হবে না। আশা করা হচ্ছে যে রোবট কেবল ত্বক স্ক্যান করে রোগ নির্ণয় করতে পারবে।

মহাকাশ অনুসন্ধান : মহাকাশে এমন অনেক কিছু আছে যা মহাকাশচারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে বা গভীর মহাকাশে থাকা অবস্থায় বাইরে থেকে স্পেসশিপ মেরামতের কাজ করার জন্য মানুষ সারা দিন মঙ্গলে ঘোরাফেরা করতে পারে না। কাজ করছে রোবট। নাসার মতো মহাকাশ সংস্থাগুলো এসব রোবটের ব্যবহার করছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মার্স রোভার। যেটি মঙ্গল গ্রহ ভ্রমণ করে মঙ্গলের শিলা গঠনের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে।

গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান : পানির নিচে গভীর সমুদ্রের মতো জায়গা যেখানে সহজে মানুষের পৌঁছনো সম্ভব নয় সেখানে বিকল্প ব্যবহার হচ্ছে রোবট। সমুদ্রের গভীরে প্রচুর পানির চাপের কারণে মানুষ নিচে যেতে পারে না এবং সাবমেরিনের মতো মেশিনগুলোও শুধু একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে ডিজাইন করা রোবট ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয়। এই রোবটগুলো রিমোট নিয়ন্ত্রিত এবং তারা সমুদ্রের গভীরে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জীবন সম্পর্কে তথ্য এবং চিত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম।

প্রতিরক্ষা: গ্রাউন্ড যুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে সোয়ার্ড রোবট। এটির বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারসহ যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কিছু স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা রয়েছে। সামরিক খাতে ব্যবহূত জনপ্রিয় রোবটের মধ্যে রয়েছে মডুলার অ্যাডভান্সড আর্মড রোবটিক সিস্টেম, যা দেখতে ট্যাঙ্কের মতো এবং শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্য টিয়ার গ্যাস এবং লেজার, এমনকি গ্রেনেড লঞ্চার রয়েছে। যুদ্ধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সামরিক রোবটের ব্যবহার সারা বিশ্বে ব্যাপক হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের অটোমেশন রোবট যেমন শত্রুর ওপর নজরদারি বা বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনার জন্য ড্রোনের ব্যবহার করছে। ফায়ার সার্ভিসে আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন রোবটের ব্যবহার লক্ষ করা যায় তবে এটি ব্যাপকভাবে চালু হয়নি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫