ক্ষতিগ্রস্ত হয় আক্রান্তের কোয়ালিটি অব লাইফ

প্রকাশ: অক্টোবর ৩১, ২০২২

অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনা, চিকিৎসা গবেষণা করছেন মানবদেহের স্নায়ুসম্পর্কিত রোগ নিয়ে। মাইগ্রেন, এর প্রতিরোধ, প্রতিকার গবেষণা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

মাইগ্রেন কী? মাইগ্রেন কেন হয়?

মাইগ্রেনের মূল উপসর্গ মাথাব্যথা। জীবনে কখনই মাথাব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে যত ধরনের মাথাব্যথা আছে তার মধ্যে ৭০-৮০ ভাগের কারণ টেনশন বা উদ্বেগ। পাঁচ ভাগের ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা, মাথায় টিউমারসহ অন্যান্য কারণ দায়ী। আর বাকিটা মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

এটা সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়ে থাকে। কৈশোর জীবনের শুরু হয় যৌবনের পড়ন্ত সময়ে শেষ হয়। দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে প্রতিদিনই। তবে মাইগ্রেনের মাথাব্যথার ধরন ভিন্ন। এটা আকস্মিকভাবে হয়। মাসে এক-দুবার অথবা এর চেয়ে কিছু বেশি। একবার শুরু হলে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে দুই দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় ব্যথার সঙ্গে বমি ভাব থাকে। এটার ব্যথা অনেকটা পালসের মতো নিয়মিত বিরতিতে তীব্র হয়ে ওঠে।

মাইগ্রেন সাধারণভাবে ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে শনাক্ত করতে হয়। সিটি স্ক্যান বা এমআরআই দিয়ে তা করা যায় না। এজন্য ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিসের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাও সেটা উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে। তবে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হলে সেক্ষেত্রে হয়তো অনেক সময় সিটি স্ক্যান করে নেয়া হয়।

মাইগ্রেনকে কি রোগ বলা যায়? উপসর্গগুলো থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় রয়েছে?

অবশ্যই এটা একটা রোগ। মাইগ্রেন দীর্ঘমেয়াদিও হয়ে থাকে। তবে এটা প্রতিদিনই হয় না। মাসে দুই-চারবার হতে পারে। এর দুই ধরনের চিকিৎসা আছেঅ্যাবোর্টিভ প্রিভেনটিভ। ব্যথা বা উপসর্গ কমাতে অ্যাবোর্টিভ চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথা দেখা দিলে ওষুধের মাধ্যমে তা থেকে রোগীকে উপশম দেয়া হয়। অন্যদিকে ব্যথাটা যাতে না হয় সেজন্য আমরা মাইগ্রেনের প্রিভেনটিভ চিকিৎসা দিয়ে থাকি। চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীকে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ দেয়া হয়। নিয়মিতভাবে ওষুধ সেবন করতে হয়, যাতে মাইগ্রেনের উপসর্গগুলোর তীব্রতা হ্রাস পায়। তিন থেকে ছয় মাসের ওষুধ দেয়া হয়। ফলে অনেক সময় রোগী এক বছর, দুই বছর ভালো থাকে। তারপর আবারো এটা দেখা দিতে পারে। এটা আরলি অ্যাডাল্ট লাইফে শুরু হয়, লেট অ্যাডাল্ট লাইফে চলে যায়। তাই সময়ের মধ্যে প্রিভেনটিভ চিকিৎসা দিয়ে বেশ কিছুদিন ভালো থাকা যায়।

দীর্ঘমেয়াদে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করে এটি? অথবা অন্য কোনো রোগকে প্রভাবিত করতে পারে?

মাইগ্রেন শরীরে দীর্ঘমেয়াদি কোনো জটিলতা তৈরি করে না। এটা এক ধরনের মাথাব্যথা। তবে এটার কারণে মানুষের কোয়ালিটি অব লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচণ্ড মাথাব্যথা হলে সেদিন হয়তো সে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারে না। প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। মাইগ্রেন হলে সাধারণত ভুক্তভোগীর অন্য কোনো রোগ প্রভাবিত হয় না।

মাইগ্রেনের সঙ্গে জেনেটিক্যালি সম্পর্ক কেমন?

মাইগ্রেনের একটা ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকে। বাবা-মা কারোর মাইগ্রেন থাকলে সন্তানদের মধ্যেও রোগ হতে পারে। যদিও জিন বিশ্লেষণ করে বিষয়টি প্রমাণিত হয় এমন জিন আমরা এখনো পাইনি।

জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে মাইগ্রেনের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

একটু অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন যেমন রাত জাগা, মানসিক চাপে থাকা, উদ্বেগ, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণএগুলো সাধারণত মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তোলে। নারীদের পিরিয়ডের আগে-পরে এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

নারী পুরুষদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন নিয়ে জানতে চাই।

নারীর তুলনায় পুরুষদের মধ্যে মাইগ্রেনে আক্রান্তের হার তুলনামূলক কম। উভয় ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো একই।

মাইগ্রেনকে কেন আলাদা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে?

আমরা নিউরোলজি শুরু করেছি ২০ বা ২৫ বছর ধরে। প্রাথমিকভাবে সব একসঙ্গে থাকলেও এখন আমরা নিউরোলজির বিভাগগুলোকে আলাদা করছি। আজকে আমাদের স্ট্রোক সোসাইটি হচ্ছে, এপিলেপ্সি সোসাইটি হচ্ছে। নিউরো ইন্টারভেনশন সোসাইটি করেছি। সম্প্রতি হেডেক সোসাইটি করেছি আমরা। তারা মাথাব্যথার বিভিন্ন ধরন নিয়ে কাজ করছে। আগামীতে হয়তো মাইগ্রেনকে সামনে নিয়ে আসবে তারা। আমি এমডি করেছি ১৯৯৯ সালে, ২৩ বছর আগে। আমার থিসিস প্রটোকল ছিল মাইগ্রেন নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় এটি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। মাইগ্রেন নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তখন হয়তো বিষয়টি নিয়ে আরো অনেক কিছু জানতে পারব।

মাইগ্রেন নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হচ্ছে কিনা?

এরই মধ্যে মাইগ্রেন নিয়ে বেশকিছু কাজ চলছে। মাইগ্রেনের প্রচলিত ওষুধগুলোর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করছেন আমাদের এখানকার একদল গবেষক। আমি নিজেও ২০০০ সালের দিকে একটি নতুন ওষুধ নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেটা আমি এখনো মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ব্যবহার করি। এভাবে কম-বেশি নানা ধরনের গবেষণা চলছে রোগটি নিয়ে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫