কনজাংটিভাইটিস : এবার আক্রান্তের হার তিন গুণ বেশি

প্রকাশ: অক্টোবর ১৭, ২০২২

শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগ বেড়েছে। রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতির হওয়ায় একবার কেউ সংক্রমিত হলে পরিবারের অন্যরাও সংক্রমিত হচ্ছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় ১৯৬৯ সালে প্রথম শনাক্ত হয় ভাইরাসজনিত এই চোখ ওঠা রোগ। পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বছর বাংলাদেশে জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, যা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে এবং এখনো দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চক্ষুবিশেষজ্ঞ বিভিন্ন চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, বিশেষায়িত হাসপাতালে বছরের সময়ে গড়ে প্রতিদিন হাজার রোগী দেখা যায়। বর্তমানে তাদের মধ্যে ৩০০ জন কনজাংটিভাইটিস নিয়ে হাসপাতালে আসছে, যা বিগত বছরে এই মৌসুমে কনজাংটিভাইটিস রোগীর তুলনায় তিন গুণ বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে আসা মোট আউটডোর রোগীদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশই কনজাংটিভাইটিস রোগী। বছরের প্রথম ছয় মাসে এটি সর্বোচ্চ বলে দাবি করেছে তারা।  চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রতিদিন গড়ে চারশর ওপরে রোগীর সেবা দিচ্ছে মেডিকেলের চক্ষু বিভাগ। যার অর্ধেকই চোখ ওঠা রোগী। যা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে অস্বাভাবিক। জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৮০০ বন্দি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যন্ত ৪০০ বন্দি রোগ থেকে সুস্থ হয়েছে।

আক্রান্তদের অধিকাংশ শিশু

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্নিয়া ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো বেশি হয়, কারণ তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্কুলে গিয়ে সবার সঙ্গে মিশছে। চোখে হাত দিয়ে কোনো জিনিস ধরছে বা অন্যজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছে। ফলে তাদের এগুলো বেশি হচ্ছে। 

কভিডের প্রভাব সংক্রমণের অন্যতম কারণ

করোনাভাইরাস-পরবর্তী প্রভাব কনজাংটিভাইটিস দেশব্যাপী বিস্তারের জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. সুব্রত দাশ। তিনি জানিয়েছেন কভিডের কারণে মানুষের বডি ইমিউনিটি অনেক কমে গেছে। ওই ইমিউনিটি কমার কারণেই অন্যান্য ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে।

চোখের ড্রপের সংকট

অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শে আবার অনেকে পরামর্শ ছাড়াই অপটিমক্স আইড্রপ ব্যবহার করছে। ফলে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতে। ১৪০ টাকা দামের অপটিমক্স আইড্রপের চাহিদা অনেক বেড়েছে। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ভাইরাসজনিত কনজাংটিভাইটিসে ওষুধের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। এছাড়া রোগের জন্য হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করাই ভালো। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করলে পরবর্তী সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন তারা। জটিল রূপ ধারণ করলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তবে সংকট রয়েছে চক্ষুবিশেষজ্ঞের। প্রয়োজনের তুলনায় চক্ষুবিশেষজ্ঞের সংখ্যা স্বল্প। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় এক হাজার চারশ বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গের চিকিৎসা রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া না করানোই মঙ্গলজনক।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫