দেশের গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান হচ্ছে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে

প্রকাশ: অক্টোবর ১৭, ২০২২

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক . মো. আব্দুল আলীম। স্নাতক পর্যায়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। চায়নার চংকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। পিএইচডি করেছেন জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটি থেকে। কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব, ক্যারিয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তা সঙ্গে

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) এবং ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের মধ্যে পার্থক্য কী?

এখানে তিনটি বিষয় আছে যেমন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কমিউনিকেশন/টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত বৈদ্যুতিক শক্তির বড় আকারের উৎপাদন, সঞ্চালন বিতরণ বিষয়ে স্টাডি বা গবেষণা। এটা সাধারণত হাই-পাওয়ার হাই ভোল্টেজের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ইলেকট্রনিকস ডিভাইস সার্কিটের নকশা অপটিমাইজেশনের বিষয়ে স্টাডি বা গবেষণা, যা লো-পাওয়ার লো-ভোল্টেজের সঙ্গে সম্পর্কিত। কমিউনিকেশন বা টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং হলো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগ বিষয়ে স্টাডি বা গবেষণা। যেমন মোবাইল, রাডার স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন।

দেশে কমিউনিকেশনের চাহিদা কেমন?

কমিউনিকেশন একটি সম্ভাবনাময় খাত। এখানে শুধু টেলিকম সেক্টরে চাকরির সুযোগ আগের তুলনায় কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। টেলিকম সেক্টরে অনেকেই কম্পিটিশন করছে। যারা ইইই পড়েছে, অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স, কমিউনিকেশন বা টেলিকমিউনিকেশন পড়ছে সবাই এক ফিল্ডে প্রতিযোগিতা করছে। এমনকি সিএসইতে যারা পড়ছেন তারাও কম্পিটিশন করছে। কার বেসিক কতটা ভালো, কে ইন্টারভিউয়ে কতটা ভালো করছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

কর্মক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটদের আয় কেমন?

আয় নির্ভর করে যোগ্যতার ওপর। বাংলাদেশী ভালো কোম্পানিতে জব নিতে পারলে এন্ট্রি লেভেলে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হতে পারে, আবার যাদের কোয়ালিটি কম তারা হয়তো ১৫-২০ হাজার টাকায় শুরু করে। যারা বিগ-টেক কোম্পানি যেমন অ্যামাজন ফেসবুকে জয়েন করেছে শুরুতে তাদের বার্ষিক আয় কোটি ২০ লাখ টাকা।

পড়ালেখার মান, গবেষণার সুযোগ এবং খরচ নিয়ে যদি বলতেন

পড়ালেখার মান তখনই বোঝা যায় যখন আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশে এবং বিদেশে গিয়ে কী করছে সেটা মূল্যায়ন করি। আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভালো অবস্থানে চাকরি করছে। এছাড়া অনেকে বিদেশে চাকরি এবং পড়ালেখা করছে। যেমন আমাদের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে, ফেসবুকের মেটা অ্যামাজনে চাকরি করছে। চীন, জাপান, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইউরোপে মাস্টার্স পিএইচডি করছে। অনেকে সেখানে পড়ালেখা শেষে চাকরিও করছে। তাদের ভিত্তি আমরাই গড়ে দিয়েছি। গবেষণার ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে শেখানো হয় কীভাবে গবেষণা করতে হয়, এর কিছুটা প্রয়োগ হয় মাস্টার্সে; আর পরিপূর্ণ প্রয়োগ হয় পিএইচডিতে। বর্তমানে এখানে দুজন শিক্ষার্থী পিএইচডি করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ডিগ্রি নিতে চার বছরে মোট টিউশন ফি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাগে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ক্যারিয়ার গড়তে আপনার পরামর্শ কী?

অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার জন্য যে পরিশ্রম করে সেই পরিশ্রমটা যদি সেখানে না দিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস, টোফেল, জিআরইর জন্য দেয় তাহলে মাস্টার্স, পিএইচডি করে আরো ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। আমার পরামর্শ হলো উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা না থাকলে দেশে বিদেশে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে চাকরি খুঁজতে হবে। আর যেকোনো ধরনের উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সবার জন্য খোলা আছে।

সেক্টরে বিদেশীরা উচ্চপদে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশীয় গ্র্যাজুয়েটরা কেন নয়?

এটা আসলে পলিসি মেইকিংয়ের ব্যাপার। একেকটা অর্গানাইজেশন মনে করে আমরা বাইরে থেকে এনে উচ্চপদে লোক বসাব। তারা হয়তো মনে করছে আমাদের এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা ভালো করছে না। কিন্তু সেটি সঠিক নয়। আমাদের দেশের গ্র্যাজুয়েট যাদেরকে উচ্চপদে নিচ্ছে না তাদের অনেকেই বিদেশে অনেক ভালো করছে। আর সরকারেরও একটা পলিসি থাকা দরকার। যদি পলিসি পরিবর্তন করা হয় যে, আমাদের এখানকরা গ্র্যাজুয়েটরাই যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন পেয়ে উচ্চপদে নেতৃত্ব দেবে, তাহলে সম্ভব। দেশীয় গ্র্যাজুয়েটরা বিদেশে গিয়ে ভালো করছে। তারা দেশে কেন পারবে না! অবশ্যই পারবে। যে গ্র্যাজুয়েট অনেক বেশি ট্যালেন্টেড তাকে বেশি বেতন দিতে হবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো মনে করছে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটদের এত বেতন দিতে হলে সেই টাকায় বিদেশীদেরই নিয়ে আসি। এসব সমস্যার কারণে দেশের গ্র্যাজুয়েটরা নিজ দেশেই ভালো পজিশনে যেতে পারছে না। তাদের অনেকে বিদেশে ঠিকই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ভালো জব করছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫