সাহসী ও জীবনঘনিষ্ঠ লেখার জন্য চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফরাসি লেখক আনি এর্নো। গতকাল রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করে।
নোবেলজয়ী সাহিত্যিক অধ্যাপক আনির বেশির ভাগ সাহিত্যকর্মই আত্মজীবনীমূলক ও জীবনঘনিষ্ঠ। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আনি এর্নো সাহস ও বস্তুনিষ্ঠ বিচক্ষণতার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা, বিচ্ছিন্নতা ও স্মৃতির শিকড় উন্মোচন করেছেন। ১৭তম নারী হিসেবে তিনি এ পুরস্কার জিতলেন।
আনির জন্ম ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। বেড়ে উঠেছেন নরম্যান্ডির ছোট শহর ইভেটায়, যেখানে ছিল তার বাবা-মায়ের মুদি দোকান ও ক্যাফেটেরিয়া। পরিবারে সাহিত্যের আবহ না থাকলেও আনির মানসপটে ছিল নিজেকে প্রকাশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। উন্নত জীবন পাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত মা-বাবার লড়াইয়ের সময়গুলো নিবিড়ভাবে দেখেছেন তিনি। তার লেখনীতে ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ। লিঙ্গ, ভাষা ও শ্রেণী সম্পর্কিত শক্তিশালী বৈষম্য চিহ্নিত করার মাধ্যমে আনি সবসময় অন্য এক গল্প বলেছেন। তাই লেখক হিসেবে তার পথচলা ছিল দীর্ঘ ও কঠিন। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৩ সালে লেখা ‘এক্সটেরিয়রস’ কিংবা ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘থিংস সিন’।
আনি এর্নোর লেখা প্রথম বই ‘ক্লিনড আউট’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে, যেখানে তিনি নরম্যান্ডিতে তার জীবনযাপনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। তবে ১৯৮৩ সালে লেখা চতুর্থ গ্রন্থ ‘আ ম্যান’স প্লেস’ দিয়ে তিনি নিজের সাহিত্যিক প্রতিভার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেন। ‘আ উইমেন’স স্টোরি’ বইয়ে মায়ের সঙ্গে আনির সম্পর্কের বুনন, উত্থান-পতন ও নীরবতা সম্পর্কে জানা যায়। তেমনি ‘শেইম’ বইটি বলে তার বাবার কথা। বইটিতে আনি লিখেছেন, ‘জুনের এক রোববার দুপুরে বাবা আমার মাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে।’ এভাবে আত্মজীবনীজুড়ে তিনি নিজের যাপিত জীবনের গল্পগুলোই বলে গিয়েছেন।
তার আ উইমেন’স স্টোরি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস বুক প্রাইজ জিতেছিল। এছাড়া ‘দ্য ইয়ারস’ গ্রন্থটি প্রশংসিত হয় ফরাসি সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে। ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রাইজ, টেলিগ্রাম রিডার প্রাইজসহ প্রিমিও হ্যামিংওয়ে পুরস্কার জিতেছেন এ লেখক। তার লেখা দ্য ইয়ারস ২০১৯ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। তার বিখ্যাত কয়েকটি উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে প্যারাডাইস (১৯৯৪), বাই দ্য সি (২০০১) ও ডেজারশন (২০০৫)।
আজ ঘোষণা করা হবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম। সর্বশেষ ১০ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম। এ বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে কার্যক্রম।