বিশ্বজুড়ে চাহিদা নিম্নমুখী

এশিয়া-আমেরিকা রুটে শিপিং ব্যয় দুই বছরের সর্বনিম্নে

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারীর শুরু থেকেই চলছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা। কভিডজনিত বিধিনিষেধে বিভিন্ন সময় বন্ধের মুখে পড়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। পণ্য সরবরাহে দেখা দেয় বিলম্ব। দুই বছর ধরে চলা এসব প্রতিবন্ধকতা শিপিং ব্যয়কে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে যায়। এটি বিশ্বজুড়ে বাড়িয়ে তুলেছে মূল্যস্ফীতির চাপ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনিশ্চয়তা ভোক্তা চাহিদাকে দুর্বল করে দিয়েছে। ফলে এশিয়া থেকে সমুদ্রপথে পরিবহন ব্যয় নিম্নমুখী হয়েছে। গত সপ্তাহে এশিয়া-আমেরিকার মধ্যকার শিপিং ব্যয় দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছে।

আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি হোঁচট খাওয়ায় সামুদ্রিক পণ্য পরিবহন ব্যয় নিম্নমুখী হয়েছে। মহামারী চলাকালীন রেকর্ড মুনাফা পাওয়ার পর পরিস্থিতি শিপিং সংস্থাগুলোর আর্থিক সম্ভাবনাও ম্লান করে দিয়েছে।

শিপিং খাতের গবেষণা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্রিউরি অনুসারে, বিশ্বের বৃহত্তম বন্দর সাংহাই থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত একটি ৪০ ফুট কনটেইনার পরিবহন ব্যয় গত সপ্তাহে হাজার ৭৭৯ ডলারে নেমেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মতো স্পট মার্কেটে ব্যয় হাজার ডলারের নিচে নেমেছে। এমনকি তিন মাস আগের চেয়েও ব্যয়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে।

এদিকে শিপিং ব্যয় কমলেও চীনের রফতানি আয় ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। যদিও সে গতি অত্যন্ত ধীর। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বৈশ্বিক সংকট উন্নত উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে সমানভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ড্রিউরির কনটেইনার গবেষণা বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাইমন হেনি বলেন, এটা এখন বলা যায় যে ট্রান্স-প্যাসিফিক এবং কনটেইনার শিপিংয়ের চাহিদার পূর্বাভাস দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। যদিও বছরের সময়ে পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তারা অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য কেনাকাটা এড়িয়ে চলছেন এবং তারা পণ্য থেকে পরিষেবার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অবস্থায় ইউরোপ এশিয়ার কারখানাগুলোও উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। চীনের অর্থনীতি ধীর হয়ে যাওয়ায় আমদানির চাহিদাও কমে গিয়েছে। ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানে এশিয়া ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশ দুর্বল প্রবৃদ্ধি কিংবা হ্রাস পাচ্ছে।

সামুদ্রিক পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় শিপিং সংস্থাগুলোর শেয়ারদরেও পতন দেখা দিয়েছে। কোপেনহেগেনভিত্তিক মায়েরস্কের শেয়ারদর ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। জার্মানির হেপাগ-লয়েডের শেয়ারদর গত বছরের জুনের পর সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। এছাড়া চীনের বৃহত্তম শিপিং সংস্থা কসকো শিপিং হোল্ডিংসের ১৭ মাসের সর্বনিম্নে এবং হনলুলুভিত্তিক ম্যাটসনের শেয়ারদর মার্চের রেকর্ড উচ্চতা থেকে অর্ধেকে নেমেছে।

সম্প্রতি কার্গো মালিকরা এশিয়ার এজেন্ট ফ্রেইট ফরওয়ার্ডদের শিপিং ব্যয় কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিছু রফতানিকারক স্পট মার্কেটের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয়ের কথা জানিয়েছেন। শিপিং সংস্থাগুলো রফতানিকারকদের প্রতি পণ্য পরিবহন বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু দুর্বল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে রফতানিকারকরা তা প্রত্যাখ্যান করছে।

শিপিং খাতের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেনেটার প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড বলেন, আমরা গ্রাহকদের মতামত সংগ্রহ করেছি। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ সফলভাবে মেয়াদি চুক্তিতে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমানোর জন্য আলোচনা করেছে। মূলত বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাসের কারণে শিপিং ব্যয় নিম্নমুখী রয়েছে। পাশাপাশি বন্দরগুলোয় পণ্যজটও কমে এসেছে। ফলে জাহাজগুলো আরো দক্ষভাবে পণ্য পরিবহন করতে পারছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫