মরু শহরে বিশ্বের উচ্চতম হোটেল সিয়েল টাওয়ার

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২

বণিক বার্তা অনলাইন

দুবাইয়ের জিফুরা হোটেল ২০১৮ সালে পৃথিবীর উচ্চতম হোটেল হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু সেই বিশেষণ বেশিদিন ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ অনেকেই জানেন। আবারো বলি, সেই বছরে মরু শহরটিতে যুক্ত হয় আরেকটি নাম। সিয়েল টাওয়ার।

জিফুরাকে হটিয়ে বিশ্বের উচ্চতম হোটেল হতে যাওয়া সিয়েল টাওয়ারের উচ্চতা ১ হাজার ২০০ ফুট। যার উপরের অংশে উলম্বভাবে দুটি টাওয়ার উঠে গেছে, যা দেখতে মাঝ আকাশে ঝুলে থাকা দরজা মনে হয়।  এ টাওয়ারের ৮২টির বেশি তলায় থাকছে সহস্রাধিক কক্ষ, যার মধ্যে ১৫০টি বিলাসবহুল স্যুট। এর আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় জাপানি ট্র্যাডিশন ওয়াবি-সাবি থেকে অনুপ্রাণিত। যা কমনীয়তা ও নন্দনতত্ত্বকে গুরুত্ব দেয়।

দুবাইয়ের মারিনায় ২০১৮ সালে শুরু হয় সিয়েল টাওয়ারের নির্মাণ। শুরু থেকেই সবার নজরে আছে উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টটি। ডেভেলপার হিসেবে পরের বছরই তিনটি পুরস্কার নিজেদের ঝুলিতে তুলেছে দ্য ফার্স্ট গ্রুপ। শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক হোটেল স্থাপত্য, শ্রেষ্ঠ আরব হোটেল স্থাপত্য এবং শ্রেষ্ঠ আকাশছোঁয়া আরব স্থাপত্য পুরস্কার। এখানেই শেষ নাই, পরে যোগ হয় ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কারদাতা বলছেন, সিয়েল আধুনিক স্থাপত্যের জন্য বিস্ময় হয়ে থাকবে।

বোঝাই যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে দুবাইয়ের অন্যতম আকর্ষণ হতে যাচ্ছে সিয়েল টাওয়ার। এর অবস্থান একদম শহরের প্রাণকেন্দ্রে। দুবাইয়ের যেকোনো এলাকা থেকে খুব দ্রুত পৌঁছা যায়। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আল-মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- উভয় থেকেই দুরত্ব মাত্র ৩০ মিনিট।

প্রচলিত হোটেল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সিয়েলকে সাজানো হচ্ছে সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুসারে। বিশ্বমানের রেস্টুরেন্ট. বিলাসবহুল জিমনেশিয়াম, হেলথ সেন্টার বা সুইমিং পুল কী নেই। অবকাশ যাপনের নানান উপকরণে সাজানো থাকবে ছাদ। সেখানে থাকছে  দুটি ডাইনিং সুবিধা। দেখা যাবে গোটা শহরের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ আর অবারিত খোলা আকাশ। উপভোগ করা যাবে উপকূল এবং পাম জুমেইরাহ দ্বীপপুঞ্জের সৌন্দর্য।    

সিয়েল টাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত আছে স্থাপত্য ও প্রকৌশলের বিশ্ববিখ্যাত আর্কিটেকচার ফার্ম এনওআরআর গ্রুপ কনসালট্যান্টস। প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইন ডিরেক্টর ইয়াহিয়া জান। দুবাইয়ের স্থাপত্য নিয়ে যারা এক-আধটু ধারণা রাখেন, তাদের কাছে নামটি পরিচিত হওয়ার কথা। হোটেল আটলান্টিস, শাংরি লা হোটেল, আমিরাত টাওয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইয়াহিয়ার নাম।

সিয়েল টাওয়ার ইয়াহিয়া জানের স্বপ্নের প্রজেক্ট। মাত্র ২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জমিতে তৈরি হচ্ছে এই হোটেল। আকাশছোঁয়া উচ্চতার অট্টালিকা হিসাবে জমির পরিমাণ বলতে গেলে কমই। সেটা মাথায় নিয়েই অভিনব কিছুর জন্য কাজ করেছেন তিনি।

গোটা পরিকল্পনায় ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়। কাঁচ ও ধাতুর ব্যবহারের কারণে সূর্যের আলোর সর্বোত্তম ব্যবহার করা যাবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাধারণ ভবনের চাইতে ২৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে সিয়েল টাওয়ারে। যেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে ১২ হাজার ঘনমিটার কংক্রিট ও ৩ হাজার টন ইস্পাত। ইয়াহিয়ার ভাষ্য মতে, এটা শুধু স্থাপত্যের বিষয় না। স্থাপত্য এবং প্রকৌশল উভয়ই। এটা এমন এক আবেগ, যেখানে শিল্প ও বিজ্ঞান মিলেমিশে একাকার।

ফরাসি শব্দ সিয়েলের অর্থ আকাশ। নামটাই যেন মানুষকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর করে তোলে। মনে করিয়ে দেয়, মানুষের জীবনে কেবল আকাশটাই সীমানা।

অবশ্য নিজেকে অত উচ্চতায় তুলতে পারার কথা কখনো কল্পনাও করেননি ৫৭ বছরের ইয়াহিয়া জান। ভাবতেও পারেননি তার হাতেই নির্মিত হতে যাচ্ছে দুবাইয়ের আইকনিক কিছু স্থাপনা। কিন্তু এখন তিনি স্বপ্ন ও কাজের মেলবন্ধন ভীষণ উপভোগ করেন। ইয়াহিয়া জানের বিশ্বাস, সিয়েল টাওয়ারকে একদিন কালজয়ী হিসেবেই গণ্য করা হবে। যেমনটা এখন এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং কিংবা ক্রিসলার বিল্ডিংকে গণ্য করা হয়।

নিজের নিয়তির উল্লম্ফনে বিস্মিত ইয়াহিয়া। সেই বিস্ময় এখন বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষায়। চলতি বছরের শেষদিকে কিংবা ২০২৩ সালের শুরুর দিকে অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে প্রতীক্ষিত সিয়েল টাওয়ার।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫