দেশের স্থাপত্যবিদ্যার উচ্চশিক্ষা বিশ্বমানের কাছাকাছি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

. মুহম্মদ ফারুক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। স্নাতক পর্যায়ে স্থাপত্যবিদ্যা পড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরবান প্ল্যানিং বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আর সলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন ইনক্লুসিভ ডিজাইন নিয়ে। দেশের স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা বিষয়ে সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন স্থপতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ সুজন

শুরুতে স্থাপত্যবিদ্যার প্রাথমিক দিকগুলো নিয়ে কিছু বলুন...

আধুনিক যুগে আমরা সবাই ঘর-বাড়িতে বসবাস করি, অফিস-আদালতে কাজ করি, শপিং করার জন্য শপিংমলে যাই, রাস্তাঘাট ব্যবহার করি চলাচলের জন্য। এটাকে ইংরেজিতে বলা হয় বিল্ট এনভাইয়রনমেন্ট। এসব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে দরকার হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যথার্থভাবে মানুষের জন্য ডিজাইন করাই স্থপতির কাজ। অর্থাৎ বিষয়গুলোর চাহিদা মাথায় রেখে ডিজাইন করাই স্থপতিদের কাজ। আর স্থাপত্য বিষয়ে আমরা যে পড়াশোনা করি সেটাকে বলা হয় স্থাপত্যবিদ্যা। স্থাপত্যবিদ্যায় লেখাপড়া শেষ করে একজন স্থপতি হিসেবে পরিচিতি পান।

একসময় হাতেগোনা দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যা পড়ানো হতো। এখন প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি খোলা হয়েছে। স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চশিক্ষার প্রসার হওয়ার কোন বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে?

বুয়েট স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এর আগে আহ্ছানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল। আহ্ছানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ইউএসএইড বাংলাদেশ টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ডএমের কয়েকজন শিক্ষক সে সময় বাংলাদেশে এসে বুয়েটে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি পড়াতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বুয়েট থেকে পাঁচজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটকে আর্কিটেকচার পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়ে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তারা বুয়েটে পড়াতে শুরু করেন। ১৯৯০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত শুধু বুয়েটেই ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি দেয়া হতো। ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি দেয়া শুরু হয়। পরে ক্রমান্বয়ে ১১-১২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯টির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া শুরু হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০২ সালে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি দেয়া শুরু হয়।

ব্র্যাকে দীর্ঘদিন ধরে স্থাপত্যবিদ্যা পড়ানো হচ্ছে? প্রতি বছর আপনাদের কতজন গ্র্যাজুয়েট বের হয় এবং তারা ক্যারিয়ারে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে কেমন অবদান রাখছে?

সামগ্রিকভাবে যদি বলি, বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর তিনশর মতো শিক্ষার্থী স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক শেষ করছে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে এবং অবকাঠামোয় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ার কারণে চাকরির বাজারে বিশাল চাহিদা রয়েছে স্থপতিদের। দেশের স্নাতকদের গত ১০-১৫ বছরের ইতিহাস দেখলে দেখা যায় যে, তারা শুধু বাংলাদেশে নয়, দেশের বাইরে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া হংকংসহ বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজে করছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক আর্কিটেকচার গ্র্যাজুয়েট উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছে। তারা স্থাপত্যবিদ্যায় মাস্টার্স পিএইচডি করার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারসহ নানা বিষয়ে গবেষণা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এছাড়া স্থাপত্যবিষয়ক বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করছে। আমাদের দেশ থেকে এখন পর্যন্ত তিনজন আগা খান অ্যাওয়ার্ডস ফর আর্কিটেকচার পেয়েছেন, যা অনেক সম্মানের। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংগঠনেও আমাদের স্থপতিরা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টের সভাপতিও একজন বাংলাদেশী স্থপতি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, আমরা শক্ত একটা অবস্থানে আছি। আর ব্র্যাকের গ্র্যাজুয়েট আর্কিটেক্টরা এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআরসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। সব মিলিয়ে তারা একটা ভালো এডুকেশন নিয়ে এখান থেকে বের হচ্ছেন।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে যেসব শিক্ষার্থী স্থাপত্যবিদ্যায় পড়তে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

বাংলাদেশে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ার জন্য যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয়, সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে আবশ্যিক রাখা হয়। ভর্তির জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়। তবে স্থাপত্য বিষয়ে পড়তে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বিষয়ের অনেক বইপত্র বিদেশী লেখকদের লেখা এবং সেগুলো বেশির ভাগই ইংরেজিতে। এছাড়া স্থাপত্যবিদ্যায় শিক্ষার্থীর নান্দনিক ডিজাইন বা আঁকাআঁকির বিষয়ে আগ্রহ থাকার প্রয়োজনীয়তাও অনেক। এছাড়া যারা বিল্ডিং দেখতে পছন্দ করে বা আঁকতে পছন্দ করে তাদের জন্য বিষয়ে পড়া সুবিধা হয়। তাহলে তাদের জন্য ন্যাচারালি কিছু ডিজাইন করা সহজ হয়ে যায়। এছাড়া চারপাশে যা ঘটছে সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, ঘুরতে পছন্দ করাসব মিলিয়ে এক্সপ্লোরার মাইন্ড থাকলে স্থাপত্যবিদ্যা পড়াটা আনন্দদায়ক হবে।

 

অনুলিখন: হাফিজুর রহমান


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫