অধ্যাপক ডা. এ কে এম সালেক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান। এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশনের বিষয়ে গবেষণা, চিকিৎসা ও অধ্যাপনা করছেন। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট ও অবস্থান নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফিজিওথেরাপি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফিজিওথেরাপি
অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক
অনুষঙ্গ আছে।
তার মধ্যে
ফিজিওথেরাপি অন্যতম।
শারীরিক বিভিন্ন
অসারতা, আঘাতের
কারণে অথবা
কোনো দীর্ঘমেয়াদি
রোগের কারণে
যদি কারো
শারীরিক অক্ষমতা
দেখা দেয়
তাহলে তাকে
বিশেষ বিশেষ
ব্যায়াম ও
কিছু থেরাপি
এবং আরো
অত্যাধুনিক কিছু
চিকিৎসা পদ্ধতির
মাধ্যমে তাকে
সুস্থ করার
যে প্রক্রিয়াটা
নেয়া হয়
সেটা ফিজিওথেরাপির
একটা উপায়।
ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক্যাল,
আবার ফিজিক্যাল
চর্চাও বলা
যায়।
ফিজিওথেরাপির সঙ্গে
ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার সম্পর্ক রয়েছে
কিনা?
চিকিৎসার প্রথম
বিষয় হলো
রোগী চিকিৎসকের
কাছে আসবেন।
এরপর চিকিৎসক
রোগীর বিভিন্ন
উপসর্গ দেখে
রোগ নির্ণয়
করে থাকেন।
এছাড়া বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
রোগ নির্ণয়
করা হয়ে
থাকে। এরপর
রোগীর অবস্থা
ও রোগ
অনুযায়ী চিকিৎসা
দেয়া হয়।
চিকিৎসা বলতে
ওষুধ থেকে
শুরু করে
উপদেশ পর্যন্ত
রয়েছে। কোনো
রোগের কারণে
যদি কেউ
শারীরিকভাবে অক্ষম
হন তাহলে
তাকে ওষুধ
বা অন্যান্য
বিষয়ের পাশাপাশি
বেশকিছু ব্যায়াম
দেয়া হয়।
এ ব্যায়ামের
প্রক্রিয়া ফিজিওথেরাপির
একটি অংশ।
শারীরিক কোন
কোন অক্ষমতার জন্য ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়।
স্পাইনাল কর্ড,
জয়েন্টের রোগ,
বুক ও
পিঠ ব্যথা,
আঘাতজনিত ব্যথা,
সেরিব্রাল পালসি,
স্নায়ুর সমস্যা,
শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক,
অস্ত্রোপচারের পর
কোনো অসুস্থতার
জন্য ফিজিওথেরাপি
দেয়া হয়।
একই সঙ্গে
নারীদের মাসিক
ঋতুবিষয়ক কিছু
রোগ যেমন
নারীদের তলপেটে
ব্যথা, জরায়ু
ছোট হয়
এগুলোতেও ফিজিওথেরাপির
প্রয়োজন হয়।
মাথাব্যথায়ও ফিজিওথেরাপি
দিতে হয়।
পায়খানা বা
প্রস্রাবের সমস্যার
ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি
লাগে। রোগের
ধরন অনুযায়ী
বিভিন্ন ধরনের
ফিজিওথেরাপি হতে
পারে। যেমন
ম্যানুয়াল থেরাপি,
মোবিলাইজেশন, মুভমেন্ট
উইদ মোবিলাইজেশন,
থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ,
ইনফিলট্রেশন বা
জয়েন্ট ইনজেকশন,
পোশ্চারাল এডুকেশন,
আরগোনমিক্যাল কনসালট্যান্সি,
হাইড্রোথেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি
ইত্যাদি।
ফিজিওথেরাপি কি
শারীরিক অক্ষম
ব্যক্তিকে পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে
পারে?
শুধু ফিজিওথেরাপি
শারীরিক অক্ষম
মানুষকে পুরোপুরি
সারিয়ে তুলতে
পারে না।
এর সঙ্গে
চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ওষুধ
খেতে হবে।
মানতে হবে
বিভিন্ন প্রকার
উপদেশ। জীবনাচারের
সঙ্গে বেশকিছু
বিধিনিষেধ যুক্ত
করতে হবে।
অর্থাৎ প্রয়োজন
অনুযায়ী জীবনযাপনকে
অনুকূল করে
নিতে হবে।
আবার অনেক
সময় দেখা
যায় অল্প
কিছু ব্যায়াম
করলেও কিছু
অক্ষমতা সেরে
ওঠে।
আমাদের দেশে
ফিজিওথেরাপির বিষয়ে
মানুষের শতভাগ
সচেতনতা এবং
এ সেবা
গ্রহণের ক্ষেত্রে মানসিকতা কেন
পুরোপুরি তৈরি
হয়নি?
এ বিশেষায়িত
শাখার সঙ্গে
পরিপূরক আরো
কিছু বিষয়
রয়েছে। যেমন
ক্যান্সারের রোগীদের
জন্য রেডিওথেরাপিসহ
বিভিন্ন থেরাপি
দিতে হয়।
তেমনি এ
ফিজিওথেরাপির জন্য
চিকিৎসা প্রক্রিয়াও
রয়েছে। কোন
রোগীর জন্য
কোন পর্যায়ে
কোন ধরনের
চিকিৎসা ও
থেরাপি প্রয়োজন
তা নিরূপণ
করতে হবে।
বিষয়টি সামগ্রিক
একটি বিষয়।
বর্তমানে ফিজিওথেরাপি
অসম্পূর্ণ ও
অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে।
এর জন্য
মানুষ পরিপূর্ণভাবে
ফিজিওথেরাপির উপকার
পাচ্ছে না।
একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কি ফিজিওথেরাপির ধরন ও
পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারেন,
নাকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তা
নির্ধারণ করে
দেবেন?
কোন রোগের
জন্য কয়টি
ফিজিওথেরাপি লাগবে
এবং কোন
ধরনের লাগবে
তা চিকিৎসক
নির্ধারণ করবেন।
আর ডিগ্রিধারী
ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসকের
ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী
ফিজিওফেরাপি দেবেন।
তবে ফিজিওথেরাপিস্ট
যদি নিবন্ধিত
চিকিৎসক হন
তবে তিনিই
পারবেন চিকিৎসা
দিতে। ফিজিওথেরাপির
জন্য বিভিন্ন
পর্যায়ের উচ্চতর
ডিগ্রি রয়েছে।
ফিজিওথেরাপির বিষয়ে
আমাদের সীমাবদ্ধতা কী ও
এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে
আমাদের করণীয়
কী?
শুরুতেই আমাদের স্বতন্ত্র একটি পরিকাঠামো করতে হবে। ফিজিওথেরাপির বিষয়ে আমাদের দেশে এখনো অনেক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। চিকিৎসককে সহায়তা করার জন্য ফিজিওথেরাপি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সার্ভিস। ফিজিওথেরাপি একাকী চলতে পারে না। এখানে অনেক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ফিজিওথেরাপিস্ট চান তিনি স্বতন্ত্রভাবে এ চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত হতে। এতে রোগীর কোনো উপকার হয় না। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফিজিওথেরাপি ভালো ফল বয়ে আনে না। রোগীরা উপকার না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিতে আস্থা রাখতে পারে না। এক বিশেষজ্ঞ কিন্তু অন্য কোনো রোগের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা দিতে পারেন না।