ছয় কার্যদিবস ধরে টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল পুঁজিবাজারের সূচক। এ সময়ে সূচকে যোগ হয়েছে ২২৮ পয়েন্ট। টানা উত্থানের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে দর সংশোধন হয়েছে। সূচক কমলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এদিন বছরের সর্বোচ্চ পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক ও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা উত্থানের কারণে সূচকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের মূল্য বেড়েছে। ফলে গতকাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। গতকাল লেনদেনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক এবং একপর্যায়ে ৭৫ পয়েন্ট যোগ হয় ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সে। তবে শেয়ার বিক্রির চাপে এর পর থেকেই পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচকটি। ফলে দিন শেষে সূচকের পয়েন্ট হারানোর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হয়। দরপতনের ফলে গতকাল আবারো ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে গিয়েছে সূচক।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরুর পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল ডিএসইএক্স। বেলা ১১টা ৭ মিনিটে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় সূচকটি। অবশ্য শেয়ার বিক্রির চাপে এর পর থেকেই পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গতকাল দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৫০৯ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৩০৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৭৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৯৫টির, কমেছে ২১৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৩টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে প্রকৌশল খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১১ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৯ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। গতকাল পুঁজিবাজারে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল জীবন বীমা খাতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১১ হাজার ৪৮১ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৯ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে।