অ্যালঝেইমার মানসিক নাকি স্নায়ুরোগ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২

ফিচার ডেস্ক

ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগের কয়েকটি ধরনের একটি হলো অ্যালঝেইমার। এটি মূলত স্নায়বিক রোগ হলেও আচরণগত দিক থেকে এর কিছু লক্ষণ মানসিক রোগের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। যার কারণে রোগীরা বুঝতে পারেন না এটি কি মানসিক রোগ নাকি স্নায়বিক রোগ। ফলে চিকিৎসা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন রোগীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালঝেইমার রোগীরা কখন কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন এটি নির্ধারণ হয় কয়েকটি লক্ষণকে কেন্দ্র করে। যেমন তার বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি, ব্যক্তিত্ব, উপলব্ধি, ওরিয়েন্টেশন। এসব কিছু হলো অ্যালঝেইমারের মূল লক্ষণ। রোগের মূল চিকিৎসাই করে থাকেন স্নায়বিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অ্যালঝেইমার একটা পর্যায়ে যেয়ে রোগীদের জ্ঞানের পরিবর্তনের কারণে তাদের আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তার আবেগ, চিন্তা আচরণের যখন পরিবর্তন ঘটে তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়। মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগের কারণে তার আচরণের পরিবর্তন হয়ে থাকে।

স্নায়বিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এটিএম হাসিবুল হাসান বণিক বার্তাকে জানান, অ্যালঝেইমার একটি স্নায়বিক রোগ। এটি কোনো মানসিক রোগ নয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, অনেকে মানসিক রোগ ভেবে ভুল করে থাকেন। মানসিক রোগ বলতে সেটিকেই বোঝায় যে রোগের লক্ষণের পেছনে মস্তিষ্কের কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। আর অ্যালঝেইমারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মস্তিষ্ক শুকিয়ে এর কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। কারণে এটিকে স্নায়ুরোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তবে তিনি জানান, উপসর্গের ক্ষেত্রে এসব রোগীর মধ্যে মানসিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এজন্য কোনো কোনো সময় অ্যালঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের সাইকিয়াট্রি চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, রোগটি এককভাবে কোনো চিকিৎসক চিকিৎসা করেন না। এখানে স্নায়বিক, মানসিক, মেডিসিন, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞসহ নার্সিং কেয়ারের ভূমিকা রয়েছে। এটি একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীরা যে চিকিৎসকের কাছেই যান না কেন যখন যে চিকিৎসকের প্রয়োজন তখন সে চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তর করা জরুরি। আর এটিই সঠিক পদ্ধতি বলে মনে করেন তারা।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন বণিক বার্তাকে জানান, সমন্বিত চিকিৎসা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। কোনো কোনো রোগের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের দেশে রোগীদের চিকিৎসায় সমন্বিত পদ্ধতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে রোগী চিকিৎসক উভয়েরই আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, রোগীদের অন্য চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর সুপারিশ করা হলে তারা যেতে চান না। তারা মনে করেন একজন চিকিৎসক হয়তো সবকিছুই বোঝেন। ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, চিকিৎসকদের মধ্যেও পেশাদারির অভাব রয়েছে। যে রোগের চিকিৎসা রোগীকে দেয়ার কথা নয়, তিনি সে রোগেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন। সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি একটি বড় দুর্বলতা। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসব দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে সরাসরি অ্যালঝেইমার রোগীদের চিকিৎসায় স্নায়বিক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জেলা সদর হাসপাতালগুলোতেও এসব রোগীর সেবা দেয়ার ব্যবস্থাও অপ্রতুল। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ছাড়া এসব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্নায়বিক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পদায়ন নেই। যার কারণে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালসহ রাজধানীতে আসেন চিকিৎসা নিতে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫