ভুলে যাওয়া রোগ অ্যালঝেইমার। এ রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক পর্যায়ে স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে বোধশক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রেও আক্রান্ত হতে থাকে। রোগটি ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে দীর্ঘদিন অবনতির হার কমিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মালিহা হাকিম। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম
অ্যালঝেইমার রোগের বৈজ্ঞানিক পরিচয় কী?
অ্যালঝেইমার একধরনের স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগ, যা ডিমেনশিয়ার প্রধানতম কারণ। ডিমেনশিয়া রোগীদের মধ্যে ৬২ ভাগই অ্যালঝেইমার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণত ৬৫ বছরের পর থেকে মানুষ অ্যালঝেইমার আক্রান্ত হন। তবে তার আগেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যাকে বলা হয় আরলি অ্যালঝেইমার ডিজিজ। এ রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে স্মৃতিশক্তির সমস্যা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বোধশক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রও আক্রান্ত হতে থাকে। যেমন কার্যনির্বাহী ক্ষমতা, ভাষা, মনোযোগ, সামাজিক বোধশক্তি ও উপলব্ধিমূলক সাড়াদান। রোগটি ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হয়।
এ ব্যাধিতে আক্রান্তরা কী ধরনের শরীরিক ও স্নায়বিক সমস্যায় পড়ছেন?
এ রোগে আক্রান্তরা মূলত কিছুই মনে রাখতে পারেন না। আমাদের কাছে রোগীর স্বজনরা এসে বলছেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার সন্তানদের নাম ভুলে যাচ্ছেন, সকালে কী খেয়েছেন মনে রাখতে পারছেন না, আগের দিন কোথায় ছিলেন সেটিও ভুলে যান, কোথাও একা একা গেলে নিজ বাসা আর চিনতে পারেন না, এগুলো মূলত রোগীর স্নায়বিক সমস্যা। এর পাশাপাশি রোগীদের মধ্যে যেহেতু বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা বেশি সে কারণে তাদের বিভিন্ন শরীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এসব মানুষের জন্য কী ধরনের ক্লিনিক্যাল সেবা জরুরি?
অ্যালঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। যেমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর পরই যদি রোগীদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসা হয়, প্রাথমিকভাবে তাদের ওষুধ থেরাপি দেয়া যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগের তীব্রতা রোধ করা যায়। এসব রোগীর স্ট্রোক হলে এর চিকিৎসাও দেয়া যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকলে এটির চিকিৎসা দিই আমরা। সঙ্গে হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলেও এটির চিকিৎসা দিতে পারি। এছাড়া ভিটামিন বি-১২ সাপ্লিমেন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
এ ব্যাধিতে আক্রান্তরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে কি উপেক্ষিত?
ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝেইমারে আক্রান্ত রোগীদের সেবা অনেকটাই উপেক্ষিত। রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা একেবারে অপ্রতুল। সরকারিভাবে দেশে শুধু তিনটি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট ছাড়া দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে সরাসরি অ্যালঝেইমারের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এসব রোগীর সেবায় নেই কোনো কেয়ার গিভিংয়ের ব্যবস্থাও। উন্নত বিশ্বে বয়স্ক রোগীদের আলাদা ইউনিট থাকে। উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পাশাপাশি অ্যালঝেইমার রোগীরা যেসব ওষুধ সেবন করেন সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। রোগীরা যতদিন বেঁচে থাকেন ততদিন তাদের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হওয়ায় এ ব্যয় আরো বহুগুণে বেড়ে যায়।
এ সমস্যা সমাধানে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কী?
সরকারিভাবে এসব রোগীকে কেয়ার গিভিংয়ের ব্যবস্থা করা। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এটি চালু রয়েছে। এ চিকিৎসায় ওষুধের দাম অনেক বেশি, এটির দাম কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রতিটি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করা জরুরি। এটি বাস্তবায়ন হলে অনেক বড় একটি বোঝা ও রোগীদের সীমাহীন কষ্ট কমে আসবে।