চিকিৎসার অগ্রগতিতে প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সমন্বয়

প্রকাশ: আগস্ট ২৯, ২০২২

অস্থিমজ্জা থেকেই রক্ত তৈরি হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় শুরুতে রোগগ্রস্ত ব্যক্তির রোগাক্রান্ত অস্থিমজ্জা নষ্ট করে ফেলে তার শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করা হয়। এরপর এটি শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলে নতুন করে অস্থিমজ্জা তৈরি হয়। বাংলাদেশে জটিল চিকিৎসার প্রাপ্যতা সহজলভ্য হয়নি। বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ সাক্ষাত্কার নিয়েছেন বণিক বার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন কতটুকু জটিল চিকিৎসা?

বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন একটা অস্থিমজ্জা সংযোজন জাতীয় চিকিৎসা। এখানে কোনো শক্ত হাড় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাগিয়ে দেয়া হয় না। অস্থিমজ্জা একটা নরম জিনিস। জায়গায় রক্তের সেলগুলো তৈরি হয়। এখানে রক্তের কোষ তৈরি হওয়ার যে মাদার সেলগুলো আছে, মাদার সেলগুলোকে স্টেম সেল বলে। সেলগুলো থেকে পরিপক্ব রক্তকোষ তৈরি হয়। যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা অণুচক্রিকা। শ্বেত রক্তকণিকা শরীরের মধ্যে সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। শ্বেত রক্তকণিকার কোষগুলো যদি পরিপক্ব না হয়ে অপরিপক্ব অবস্থায় শরীরের মধ্যে চলে আসে তখনই অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা দেখা দেয়। শারীরিক অবস্থাকে বিভিন্ন ধরনের ব্লাড বা রক্তের ক্যান্সার বলা হয়।

বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন রোগীর কোন অবস্থায় জরুরি?

মানবদেহে রক্তের ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়ার বা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করা যায়। আবার নন হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। লিম্ফোমা মায়েলোমার ক্ষেত্রেও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা যায়। অনেক ব্লাড ক্যান্সার সাধারণ কেমোথেরাপিতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় না। যেমন শিশুদের অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া কেমোথেরাপিতে খুব ভালো রেসপন্স করে। রোগগুলো যখন ভালো হয় না অথবা তাদের অস্থিমজ্জা সাড়া দেয় না, সেক্ষেত্রে আমরা রোগীর অস্থিমজ্জায় খারাপ ধরনের সেলগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলি। তার অস্থিমজ্জায় দাতার স্টেম সেল প্রবেশ করাই। যে দাতার কাছ থেকে সেলগুলো সংগ্রহ করি তার কাছ থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেলগুলো অস্থিমজ্জা থেকে রক্তে নিয়ে আসি। মেশিন দিয়ে সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করি। অতীতে অস্থিমজ্জা সরাসরি দাতার হাড় থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রতিস্থাপন করা হতো। এখন দাতার রক্ত থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো ক্রায়োব্যাংক বা বিশেষ প্রিজারভেশন করা হয়।

দেশে বোন ম্যারো চিকিৎসার অগ্রগতি কতটুকু?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা গেলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে। আমরা দেশেই বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করতে পারব। খরচ বেঁচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।

বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন কতটুকু ব্যয়বহুল?

আমরা -১০ লাখে অটোলোগাস ট্রান্সপ্লান্ট করাতে পারব, -২০ লাখ টাকায় অ্যালোজেনিক ট্রাস্টপ্লান্ট করানো যাবে, যেটা অন্যান্য দেশে করতে গেলে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা খরচ হতে পারে।

চিকিৎসার সম্প্রসারণে এখন করণীয় কী?

অন্যান্য অনেক জায়গায় এখন বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো আমরা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করতে পারিনি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবেই আমরা এসব করতে পারছি না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখনো সেই টাকা ছাড় করাতে পারিনি। দেশের ভেতরেই সিএমএইচে হয়, আর কিছু প্রাইভেট মেডিকেলে হয়। সরকারিভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে ২০১৪ সাল থেকে ট্রান্সপ্লান্ট চালু হলেও কভিড ১৯ সংক্রমণের পর তা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা চাইছি বাংলাদেশে পুরনো যে আটটি মেডিকেল কলেজ আছে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু হোক।

সবার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা হচ্ছে না। এটা জটিল চিকিৎসা কিন্তু সেদিকটা পুরোপুরি আমরা চিকিৎসকরা দেখব। চিকিৎসা শুরু করার জন্য যে লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার সেটা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের নেই। সেজন্য সব দায়িত্বপ্রাপ্তকে আমরা আহ্বান করব এর জন্য উদ্যোগী হতে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫