বিআইডিএসের গবেষণা প্রতিবেদন

শ্রমিক অদক্ষতায় দেশের উৎপাদনশীলতা কম

প্রকাশ: আগস্ট ২৯, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েক বছরে দেশের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি দশকে বৃদ্ধির হার প্রায় শতাংশ। কিন্তু দেশের উৎপাদনশীলতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে পুঁজি শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে শ্রমের পরিমাণের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে প্রবৃদ্ধির হার স্থবির হয়ে যেতে পারে।

গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে দ্য রিসার্চ ফাইন্ডিংস অব দ্য লেবার মার্কেট স্টাডিজ ফর স্কিল অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) করা ২৩টি গবেষণার প্রতিবেদন সময় উপস্থাপন করা হয়। পাট, ওষুধ, প্লাস্টিকসহ ১৫টি শিল্প খাতের ওপর সমীক্ষাটি চালায় সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধান অতিথি ছিলেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক . বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরিন আফরোজ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) . মোহাম্মদ ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট-ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী প্রমুখ সময় উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন . কাজী ইকবাল।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্মাণ খাতে সবচেয়ে বেশি অদক্ষ শ্রমিক রয়েছেন। খাতে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ৯৮ শতাংশ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল খাতে ৭২ শতাংশ শ্রমিকের কোনো শিক্ষা নেই, কৃষি প্রক্রিয়া শিল্পে যোগ্য শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব আছে। দেশের ৯৬ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষিত নন এবং বিদেশগামী ৪৭ শতাংশ শ্রমিকই অদক্ষ। শ্রমিকরা প্রশিক্ষিত নন বলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে কম।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি সুশাসনের আগে উন্নয়ন জরুরি। কেননা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দুবেলা খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং সঠিক বিচার চায়। এগুলো থাকলেই তারা খুশি। এজন্য আগে উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি সুশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। এটা মাথায় রাখতে হবে গ্রামের মানুষ সুশাসন বোঝে না, উন্নয়ন বোঝে। গ্রামের মানুষ পানি, বিদ্যুৎ, ঘর, খাবার ভালোমতো থাকতে চায়। সুশাসন বলতে তারা সামাজিক নিরাপত্তা চায়। দেশে আজীবন বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমার নিয়মিত সাক্ষাৎ হয়। তারা দুই-এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুতের কষ্ট সহ্য করছেন। তবে সমস্যা বেশি দিন থাকবে না।

মূল প্রবন্ধে . কাজী ইকবাল বলেন, দেশে দক্ষতার ঘাটতি প্রায় ৩০ শতাংশ। বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলেও প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন হয় না। ফলে দক্ষতার ঘাটতি বাড়তে থাকে। তৈরি পোশাক খাতে নারী কর্মীরা পুরুষ কর্মীদের তুলনায় বেশি দক্ষ। কিন্তু সেখানেও বড় পদগুলোয় দক্ষতার ঘাটতি দেখা যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বড় পদগুলোর জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। আবার বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষিত কর্মী পাচ্ছে, আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষিত কর্মী পাচ্ছে না। সেখানে অল্প শিক্ষিত বা অদক্ষ কর্মীর আধিক্য বেশি।

. বিনায়ক সেন বলেন, শ্রমবাজারে সঠিক মজুরি প্রশিক্ষণের আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে দেয়। শ্রমবাজারে মজুরির সঙ্গে প্রশিক্ষণ মেলাতে হবে। আগামী ১০ বছরে শ্রমিকের যে চাহিদা হবে সে অনুযায়ী এখন থেকে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এছাড়া বিদেশী শ্রমিকদের আরো দক্ষ করে পাঠাতে হবে। তা না হলে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে টেকসই উন্নয়নে পিছিয়ে পড়বে দেশ।

শিল্প-কারখানায় অদক্ষ শ্রমিক যেমন উৎপাদনশীলতা কমাচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে একসময় মধ্য আয়ের ফাঁদের মতো নিম্ন উৎপাদনশীলতা ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। ভোকেশনাল শিক্ষাকে যাতে সামাজিকভাবে ছোট করে দেখা না হয় সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন গবেষকরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫