বিশেষজ্ঞ তৈরিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই

প্রকাশ: আগস্ট ২২, ২০২২

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম রাজধানীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিনা পারিশ্রমিকে সহস্রাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি। চিকিৎসাবিদ্যায় অবদানের জন্য বছর তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কিডনি রোগের চিকিৎসা সীমাবদ্ধতা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

সিংহভাগ কিডনি রোগী শেষ পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য আসে। এর আগে চিকিৎসকের কাছে তারা আসছে না। কেন এমন হচ্ছে?

দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ, কিডনির নিজস্ব প্রদাহ (গ্লোমেরুলির প্রদাহ বা জিএন), প্রস্টেট, পাথর এসব বিষয় কখনই খেয়াল করা হয়নি। এসব সমস্যাকে কখনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে সমস্যাগুলো জটিল আকার ধারণ করে। শুরুতে কিডনি রোগ প্রকাশ পায় না। পরে যখন কিডনি একেবারে অকেজো হয়ে যায় তখনই কেবল লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। লক্ষণ প্রকাশ না পেলে কেউ চিকিৎসকের কাছে আসে না, এটা স্বভাবজাত অভ্যাস।

অনেকের প্রতিস্থাপন-পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়। এর কারণ কী?

কিডনি প্রতিস্থাপন-পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্রোপচার সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন হঠাৎ কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে, ইউরেটার ব্লক হয়ে যেতে পারে, কোনো স্থানে সমস্যা দেখা দিয়ে রক্ত আসা শুরু করতে পারে। এরপর তিন মাসের মাথায় প্রতিস্থাপিত কিডনি প্রত্যাখ্যান (কিডনি রিজেকশন) একটি বড় জটিলতা। মূলত মানুষের শরীর বাইরের কোনো কিছু গ্রহণ করতে চায় না। অন্যের শরীর থেকে কিডনি এনে প্রতিস্থাপন করা হলো তা শরীরে গ্রহণ করতে চায় না। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর নিয়মিত পরীক্ষা করা হলে তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হয়ে থাকে। এক বা দুই বছর পরে জানা যায়, কিডনি অকেজো হওয়ার প্রধান কারণ ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়া। রোগীদের ক্রয়ক্ষমতা কম থাকায় যে ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে থাকে তা খায় না।

রোগ কি শতভাগ প্রতিরোধ করা যায়?

কোনো রোগই শতভাগ প্রতিরোধ করা যায় না। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি রোগ অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়। জিএন যদি শুরুতেই শনাক্ত করা যায় তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি জটিলতা এড়ানো যায়। মূত্রনালির রোগ ইউরেথ্রাল প্রতিবন্ধকতা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। শুরুতেই শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেশে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবস্থাপনা কেমন?

পুরনো রোগী ছাড়াও কিডনি অকেজো হওয়া নতুন রোগী প্রতি বছরই যোগ হচ্ছে, যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালে অনেক ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপন কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনটিও রোগীদের জন্য সহজ করতে সংশোধন করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও কিছু ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাটাই ব্যয়বহুল।

কিডনি রোগের চিকিৎসায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা কী?

খরচ একটি বড় বিষয়। প্রয়োজনীয় অনেক মেশিন সরকারকে কিনতে হয়। মেশিন পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। শুধু লোকবল বা মেশিন থাকলেই হবে না, প্রতিটি মেশিন পরিচালনার জন্য ফ্লুইড প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে নেফ্রোলজিস্ট ইউরোলজিস্টদের সংকট রয়েছে।

সরকারির চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কিডনি চিকিৎসায় এগিয়ে রয়েছে। এর কারণ কী?

সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সময়স্বল্পতা একটি বড় বিষয়। যেসব রোগের জন্য লম্বা সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়, কোনো কোনো অস্ত্রোপচার -১২ ঘণ্টা সময় ধরে করতে হয়। শুধু অস্ত্রোপচার নয় ফলোআপেরও প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ বাদে কর্মঘণ্টা হচ্ছে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা। মাত্র সাড়ে ছয় ঘণ্টা। সময়ে তো বড় অস্ত্রোপচার হয় না। এরপর অনেকক্ষণ ফলোআপ করতে হবে।

দেশে নেফ্রোলজিস্ট ইউরোলজিস্টের সংখ্যা, কিডনিবিষয়ক গবেষণার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

কিডনি রোগের চিকিৎসক বাড়াতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপের বিকল্প নেই। বেসরকারিভাবে রোগের বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে না। আমরা যেটা করতে পারি, নির্দিষ্টভাবে তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে তারাও অংশ নিয়ে দক্ষ হতে পারেন।

আপনি নিজ হাসপাতালে বিনা পারিশ্রমিকে সহস্রাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। কাজের জন্য আপনার অনুপ্রেরণা কী?

অনেক পরিশ্রম করেছি। এতে ভালোভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে সফল হয়েছি। শুরুতেই আমরা বিনা পারিশ্রমিকে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছি। সেই সময় অনেক রোগীকে ওষুধও কিনে দিয়েছি। পরে আমার হাসপাতালের সক্ষমতা বেড়েছে। পর্যন্ত হাজার ১৫১টি কিডনি বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিস্থাপন করেছি। আমি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য পারিশ্রমিক নিই না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫