স্মার্টফোন উৎপাদনে স্বর্ণযুগ হারাচ্ছে চীন

প্রকাশ: আগস্ট ১৪, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন থেকে শুরু করে অ্যাসেম্বল, বাজারজাতের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম বাজার চীন। ১৯৮৭ সালে দেশটিতে প্রথম ওয়্যারলেস টেলিফোন কমিউনিকেশন পরিষেবা চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বৈশ্বিক বাজারের শীর্ষে উঠে আসে দেশটি। তবে বিভিন্ন সমস্যা প্রতিবন্ধকতার কারণে ধীরে ধীরে স্মার্টফোন খাতের সে স্বর্ণযুগ হারাচ্ছে দেশটি। খবর প্রোম্যাগাজিন রয়্যালসব্লু।

বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোনের বাজারজাত ১৪ দশমিক শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে শাওমি, ভিভো, অপোসহ যেসব মাল্টি বিলিয়নেয়ার প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানকে দেশটির প্রযুক্তি খাতের মেরুদণ্ড আখ্যা দেয়া হয়েছিল তারাও উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি কমার কথা জানিয়েছে।

বাজারের শীর্ষস্থান হারানোর পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ, চিপ সংকট, বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয় পেরিয়ে দেশটি স্মার্টফোন উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন থেকে যে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল সেটি এখন চাক্ষুষ। গত ১০ বছরে নতুন নতুন ক্রেতা উন্নত ডিভাইসের চাহিদার মাধ্যমে চীনের স্মার্টফোন বাজার শীর্ষে উঠেছিল। বর্তমানে তা বিলীনের পথে।

এক দশক আগেও চীন মোবাইল ন্যাশনে পরিণত হতে চেয়েছিল। দেশটি রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি গ্রামে ফোরজি নেটওয়ার্কের বেজ স্টেশন স্থাপন করেছিল। এর মাধ্যমে অপো ভিভো প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কাছে তাদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। এর মধ্যে অনেকেই এর আগে কখনো টাচস্ক্রিন ফোন ব্যবহার করেনি। অন্যদিকে অ্যাপল, স্যামসাং মটোরোলার মতো প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিপ্রেমী অধিবাসীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রিমিয়াম সেগমেন্টের স্মার্টফোন বাজারজাত করেছে। তবে পরবর্তী সময়ে পণ্যের ত্রুটি, বিপণনের ক্ষেত্রে ভুল উদ্যোগ ভু-রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার হারায়।

সম্প্রতি দেশটি ফাইভজি নেটওয়ার্ক বিস্তারে পদক্ষেপ নিলে স্মার্টফোন উৎপাদনকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই উদ্ভূত সমস্যার বিষয়টি শনাক্ত করতে পেরেছিল। প্রধান একটি সমস্যা হচ্ছে চীনের স্মার্টফোন বাজার অনেকটাই পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। গত বছরের শেষে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে দেশটিতে ১৬০ কোটি স্মার্টফোন সচল থাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারের হার বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় বেশি এবং এটি তুমুল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে।

অন্যদিকে অধিবাসীদের মধ্যে স্মার্টফোন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও কমে গিয়েছিল। বর্তমানে যেসব স্মার্টফোন রয়েছে সেগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় পরিষেবা দিতে সক্ষম। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর স্থায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। ফাইভজি পরিষেবা ব্যবহারে যে ব্যয় বহন করতে হবে সেটি জানার পর চীনের অধিকাংশ অধিবাসী ফোরজি সাবস্ক্রিপশনেই থেকে গেছে।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের একজন গবেষক টবি ঝু বলেন, চীনের ভোক্তারা এখন স্মার্টফোন খাতে ব্যয় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। সেলফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করেছিল জুনে অনলাইন শপিংয়ে প্রমোশন দেয়ার মাধ্যমে চাহিদা বাড়ানো যাবে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং স্মার্টফোনের বাজার গত বছরের পর্যায়ে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। এমনকি কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তাদের আইফোনে খুবই অপ্রচলিত ছাড় সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছিল।

একই সময়ে কভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ রোধে চীন যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সেগুলো সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। লকডাউনের কারণে খুচরা বিক্রি, লজিস্টিকস এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদন খাতকেও প্রভাবিত করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্টকে রেখেছিল চাহিদা কমার কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে যারা বেশি যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ করেনি তারা চাহিদা কমার কারণে বাজার হিস্যা হারানোর কথা জানিয়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত, আগামী বছরের মধ্যে গ্রাহকদের চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং খাত পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে। তবে খুব কমসংখ্যকই চীনে স্মার্টফোন উৎপাদনে সোনালি যুগ ফিরে আসার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫