১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকে

প্রকাশ: আগস্ট ১২, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নতুন রেকর্ড গড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায়। ব্যাংক খাতে এত পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবারই প্রথম। শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা বেড়েছে। খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে তথ্য জানা গিয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে ঋণগ্রহীতাদের সুরক্ষা দিতে নজিরবিহীন নীতি ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন গ্রাহকরা। আবার ২০২১ সালজুড়েও ছিল নীতিছাড়ের ছড়াছড়ি। ঋণগ্রহীতারা নীতিছাড়ের সুফল উপভোগ করছেন চলতি বছরও। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালায়ও অনেক সহজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের হাতেই পুনঃতফসিলের সব ক্ষমতা তুলে দেয়া হয়েছে। নজিরবিহীন নীতিছাড়ের পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছিল খেলাপি, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার ঋণ। ওই সময়ে বিতরণকৃত মোট ঋণের দশমিক ৫৩ শতাংশ ছিল খেলাপির খাতায়। আর ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল লাখ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। হিসেবে গত ছয় মাসে ব্যাংক খাতে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি।

গত তিন মাসে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। জুন শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের শতাংশ বর্তমানে খেলাপি। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিদেশী ব্যাংকগুলোর ৭৩ কোটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১৭৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। জুন শেষে বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দশমিক ৪০ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের নীতিছাড়ের কারণে ২০২০ ২০২১ সালে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রিত ছিল। এখন নীতিছাড়ের মেয়াদগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। গত আড়াই বছর বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের দুর্যোগের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। নতুন করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরো বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো ভালো আছে।

২০১৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। ২০২০ সালে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়। প্রায় দুই বছর ব্যাংকের গ্রাহকরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। সময়ে অনেক খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। কারণে গত দুই বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হার হ্রাস পায়। কিন্তু ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ফিরে আসায় চলতি বছরের শুরু থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। জুন শেষে খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ।

তবে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দেখাচ্ছে সেটিও সঠিক নয় বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০১৯ সালে এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছিল, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখা হয়েছে। খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ ব্যাংকগুলো দেখায়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার চেয়ে অনেক বেশি। আইএমএফের মতে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫