বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে শিল্পাঞ্চলভিত্তিক আলাদা ছুটির দিনের পরিকল্পনা

প্রকাশ: আগস্ট ০৮, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসায়ীরা বলছেন সব শিল্পের জন্য বাস্তবসম্মত নয়

দেশে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের তীব্রতা কমিয়ে আনতে পরীক্ষামূলকভাবে শিল্পাঞ্চলগুলোয় আলাদা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা না পেলেও সংকট মোকাবেলায় প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা। তবে তারা এও বলছেন, সব শিল্পের জন্য সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। কেননা পোশাক শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাগুলো ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখতে হয়। একই মত সিরামিক শিল্পের উদ্যোক্তাদেরও।

গতকাল বিদ্যুৎ ভবনে ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ বিকেএমইএর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন ঢাকার বাইরে প্রায় ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকায়ও দেড়-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আগামী মাস থেকে কীভাবে পরিস্থিতি আরো উন্নত করা যায়, কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, লোডশেডিং থেকে কতটুকু বের হয়ে আসা যায়, সেসব বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মূলত এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

শিল্পাঞ্চলগুলোয় আলাদা দিনে সাপ্তাহিক ছুটি দেয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, ব্যবসায়ীদের অঞ্চলভিত্তিক সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেমন শুক্রবারে গাজীপুর অঞ্চলের সব কারখানা বন্ধ রেখে সেখানে লোডশেডিং দেয়া। এভাবে এলাকাভিত্তিক দিন ঠিক করে কারখানা বন্ধ রেখে লোডশেডিং দেয়া যেতে পারে। তাহলে ৫০০-৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি গ্যাস সাশ্রয় যেমন হবে তেমনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে।

প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা খুশিমনে মেনে নিয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টাও মেনে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেহেতু বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতি তাই সে হিসেবে তারা সমন্বয় করে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে কমলে তখন সে অনুযায়ীও সমন্বয় করা হবে।

দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সমস্যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী মাস থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকেরও কম লোডশেডিং দেবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে ধীরে ধীরে সামঞ্জস্য তৈরির চেষ্টা করা হবে। আশা করছি আগামী অক্টোবর থেকে দেশ পুরোপুরি লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

বৈঠকে অংশ নেয়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা না পেলেও সেই আশায় শিল্পাঞ্চলগুলোয় আলাদা দিনে সাপ্তাহিক ছুটি দেয়ার প্রস্তাবে তারা সায় দিয়েছেন। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম থেকে সুফল পেলে পরবর্তী সময়ে আলাদা দিনে সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি চূড়ান্ত করা যেতে পারে। পাশাপাশি তারা এও বলছেন, পোশাক কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটির সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নযোগ্য। তবে অনেক শিল্প আছে যেগুলো ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখতে হয়। সেসব শিল্পের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিষয়ে একটি পরিকল্পনা করেছে, সেটির বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সারা দেশের সাতটি অঞ্চলে যদি আলাদা দিনে সাপ্তাহিত ছুটি দেয়া যায় তাহলে ৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। তাদের মূল লক্ষ্য শিল্পাঞ্চলগুলো। গাজীপুর, সাভার বা অন্যান্য অঞ্চলে একেকদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন আরো বলেন, ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবেন কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এখনই সে নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব না। এলাকাভিত্তিক সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্ধারণ করা হলে তার ফল ইতিবাচক হবে। অন্তত এক মাস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ফলাফল বোঝা যাবে।

একসময় যখন নিয়মিত লোডশেডিং হতো, তখন এভাবেই ছুটির ব্যবস্থা চালু ছিল জানিয়ে বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম আহসান বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি, প্রয়োজনে সে ধরনের সূচি আবার চালু করা হোক। তবে ডায়িং স্পিনিং ফ্যাক্টরিকে কিছুটা ছাড় দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেছি।

একই মত জানিয়েছেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যেন শুধু পোশাক কারখানার জন্য প্রযোজ্য হয়, সে কথা আমরা বলেছি। কারণ ডায়িং, স্পিনিং কারখানাগুলোকে সিদ্ধান্তের আওতায় আনা সম্ভব না। অর্থাৎ সব শিল্পের জন্য সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও সিরামিক শিল্পের উদ্যোক্তারা সরকারি পরিকল্পনা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) জেনারেল সেক্রেটারি ইরফান উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমি এখনো জানি না সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা। যদি আমাদের শিল্পের জন্যও হয় তবে তা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ আমাদের কারখানাগুলো ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে হয়। তাই সরকারের উচিত হবে বিষয়ে খাতভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫