দেশে এ ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট রয়েছে

প্রকাশ: আগস্ট ০৮, ২০২২

দেশে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বরাবরই ঊর্ধ্বমুখী। দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার মারাত্মক সংকট রয়েছে। এছাড়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসার আওতায় আসে না সিংহভাগ রোগী। এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন বণিক বার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ কী?

ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার জন্য ৯০ ভাগ দায়ী তামাক তামাকজাতীয় দ্রব্য। আর বাকি ১০ ভাগ অন্যান্য কারণে হয়ে থাকে। যেমন ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে সাধারণত ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে, যদিও কম বয়সীদের মধ্যেও রোগটি দেখা যায়। কিছু আছে বংশগত, যাদের বাবা-মা বা ভাইবোন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের ধূমপান না করলেও রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া পরিবেশগত কারণেও ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ এবং পরিবেশ দূষণকারী জিনিসের কারণে।

দেশে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী কেন?

ক্যান্সার হওয়ার ক্ষতির কারণগুলো আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। তামাকের ব্যবহার কিছুটা কমলেও পরোক্ষ ধূমপান কমেনি। ধোঁয়া ধোঁয়াবিহীন দুই ধরনের তামাকই ক্যান্সার তৈরি করে। বিশেষ করে ফুসফুস, ওরাল খাদ্যনালির ক্যান্সার হতে পারে। নগরায়ণের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কায়িক পরিশ্রম না করার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায় বা শরীরের চর্বি বেড়ে যায়, এতেও কিন্তু ব্রেস্ট, কোলন, প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো কম বয়সীরাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সারে। এক্ষেত্রে ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার প্রধানত দায়ী। এসব কারণে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী।

শনাক্ত রোগীর চার ভাগের এক ভাগ চিকিৎসা পায়। সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

রাজধানী থেকে বের হয়ে ক্যান্সার সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যদিও দেশের সরকারি ১৩টি মেডিকেল কলেজে ক্যান্সারের ইউনিট রয়েছে। তবে এসব সেবা রোগী অনুপাতে খুবই অপ্রতুল। আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার বিশেষায়িত হাসপাতাল হচ্ছে, এখানে জোর দিতে হবে রেডিওথেরাপিতে। দেশে মুহূর্তে রেডিওথেরাপি যন্ত্র লাগবে ২৫০ থেকে অন্তত ৩০০টি। অথচ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে যন্ত্র আছে মাত্র ৩৫টির মতো। খুবই হতাশাজনক অবস্থা ক্যান্সার সেবায়। তবে আশা করা যায় বিভাগীয় পর্যায়ে হাসপাতাল চালু হলে সংকটের অবসান হবে।

গ্রামাঞ্চলে এখনো ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়নি কেন?

বিভিন্নভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালালেও এভাবে কতজন মানুষ জানতে পারছে এর সঠিক হিসাব নেই। দেশের কমিউনিটি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ক্যান্সারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এতে সচেতনতাও বাড়বে, আবার রোগীদের সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা যাবে।

ক্যান্সার চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানো এবং খরচ কমাতে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

রাজধানীকেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে গেলে রোগীদের খরচ কমে আসবে। সরকারিভাবে রোগীদের রেডিওথেরাপি নিতে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। আর বেসরকারি পর্যায়ে ব্যয় হয় প্রায় লাখ টাকা। এখানে সমন্বয় জরুরি। বেসরকারি ফি কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ফান্ড ক্যান্সার চিকিৎসায় অবদান রাখতে পারে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া এককালীন ৫০ হাজার টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে লাখ করতে হবে। ক্যান্সার রোগীদের পরিবহন সেবায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা করা যায়।

ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিবেশ তামাকমুক্ত করা। বিশেষ করে প্রকাশ্যে ধূমপান একেবারে নিষিদ্ধ করতে হবে। ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন খুসখুসে কাশি, বুকে ব্যথা, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত আসার মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যদি এক মাসের মধ্যে এটি ভালো না হয় তাহলে অন্তত একটা বুকের এক্স-রে করতে হবে। তারপর কফ পরীক্ষা করে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। পরিবেশ ঠিক রেখে কারখানাগুলো তৈরি হলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যান্সার শনাক্তের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো লো ডোজ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (এলডিসিটি) এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিভেনটিভ সার্ভিসেস টাস্কফোর্সের সুপারিশ করা ফুসফুসের ক্যান্সার স্ক্রিনিং পরীক্ষা। যেসব এলাকায় ধূমপানের প্রবণতা বেশি সেসব এলাকার মানুষের যদি এলডিসিটি করা যায় তাহলে রোগটি প্রতিরোধ করতে পারব। যদিও এটির ব্যয় একটু বেশি। তবে সরকার কোনো একটি হাসপাতালে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারে। এছাড়া সবখানে ক্যান্সার নির্ণয়ের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫