ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কভিড-১৯ মহামারী বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর জের ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ ও পরিষেবার দাম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। টানা ছয় মাস ধরে ভারতে মূল্যস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যের ওপরে রয়েছে। সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে এ নিয়ে তৃতীয় বার সুদের হার বাড়াল ব্যাংকটি।
চলতি বছরের জুনে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) রেপো রেট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করেছে। এক বিবৃতিতে এমপিসি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকজুড়েই মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশেরও ওপরে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। একই সময়ে স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) হার ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ হবে। মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এমএসএফ) ক্ষেত্রে এ হার হবে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে এক অনির্ধারিত সভায় রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রেপো রেট ৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছিল। জুনে তা আরো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়। এ সত্ত্বেও ভারতের বাজারে পণ্যদ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। বরং অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আগামী মাসগুলোতেও পণ্যদ্রব্যের দাম অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
এ বিষয়ে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ ভারতীয় অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করেছে। ২০২৩ সালের শুরুতে আরো এক দফা রেপো রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়াতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের ঊর্ধ্বমুখিতায় ভোক্তা ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এ বছরের প্রথম তিন মাসেও দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে স্থির থাকবে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেন, বাইরের খাত থেকে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকবে। মুদ্রানীতি কঠোর করার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবার সম্মতিক্রমেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর ১০ বছরমেয়াদি বন্ডের ইল্ড বেড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে সামান্য মান ফিরে পেয়েছে ভারতীয় রুপি। রেপো রেট বাড়ানোর পর ডলারের বিপরীতে রুপির দর দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক শূন্য ৬৭৫। সিদ্ধান্তের আগে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দাম ছিল ৭৯ রুপি ১৬ পয়সা।