তারা সাপুড়ে নন। তবু সাপ ধরে বেড়ান। এখন পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপদগ্রস্ত ৩৫ প্রজাতির দেড় হাজারেরও বেশি সাপ উদ্ধার করে নিরাপদে অবমুক্ত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক দল শিক্ষার্থী।
২০১৮ সালে জাবির দর্শন বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’। ‘ভালো থাকুক মানুষ, ভালো থাকুক প্রকৃতির সন্তানেরা’—
স্লোগানকে ধারণ করে সাপ মারা ঠেকাতে আহত ও বিপদগ্রস্ত সাপকে উদ্ধার করে পুনরায় প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়ে দেশে সাপের প্রজাতি সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গঠিত হয় ক্লাবটি।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক রেসকিউ কার্যক্রম শুরু করলেও বন বিভাগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন হটলাইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। কোথাও সাপ আটকে পড়া বা বিপদে পড়ার খবর পেলেই বন বিভাগকে অবহিত করে সাপ উদ্ধার করেন এবং আহত সাপকে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসাা দিয়ে অবমুক্ত করেন সংগঠনের সদস্যরা।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ সাপ উদ্ধারসংক্রান্ত কল এলেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডাকে ছুটে যান মাহফুজ ও তার দল। সাপ ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষায় ভূমিকা রাখে। সাপ মারা নিরুৎসাাহিত করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও সাপে কাটা মৃত্যু কমাতে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
সাপ উদ্ধার ও অবমুক্ত করার তথ্য নিয়মিতভাবে বন বিভাগকে অবহিত করেন তারা। প্রথমে সাপ উদ্ধার নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে সংগঠনটি অন্যান্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং সংরক্ষণেও কাজ করছে। এ বিষয়ে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, সাপ দেখলেই মারতে হবে—দেশের মানুষকে এ প্রবণতা থেকে বের করে আনা এ ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য। সাপের উপকারের দিকগুলোও আমাদের বুঝতে হবে। দীর্ঘ একটা সময় সাপ চেনা ও সাপের আচরণ নিয়ে স্টাডি করেছি। প্রথমে ক্যাম্পাসের হল ও কোয়ার্টারগুলোয় রেসকিউ করতাম। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কল আসে।
সংগঠনটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক তামান্না ইসরাত মিম জানান, মানুষের সঙ্গে প্রত্যেক প্রাণীরই প্রকৃতিতে অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে অনেক সাপই হারিয়ে যেতে বসেছে। জীববৈচিত্র্যের প্রতিটি প্রাণী যে প্রকৃতিতে অপূরণীয় ভূমিকা রাখে, মানুষের জন্যও তা কল্যাণকর হতে পারে। সে লক্ষ্যে দেশজুড়ে পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। এর মধ্যে ২০-৩০ জন প্রশিক্ষিত সাপ উদ্ধারকর্মী রয়েছেন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের।
সাপ নিয়ে কাজ করা সরকার স্বীকৃত একমাত্র ফাউন্ডেশন এটি।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ছয় হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ সাপে কাটলে হাসপাতালে যায়। বাকি সবাই যায় ওঝার কাছে। দেশের বেশির ভাগ প্রজাতির সাপই নির্বিষ। বিষধর সাপ কাটলে ওঝার কাছে না নিয়ে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভেনম টেস্টের পর ভেনমের ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা সম্ভব। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং সাপ রেসকিউর মাধ্যমে সাপ ও মানুষ উভয়কেই বিপদমুক্ত করতে কাজ করছেন এ সংগঠনের কর্মীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সংগঠনটির শাখা কমিটি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর বাজারে রয়েছে তাদের প্রধান অফিস। গণচাঁদার ভিত্তিতে চলে মাহফুজ ও তার বাহিনীর পরিবেশ সংরক্ষণের এ কার্যক্রম।