বঙ্গোপসাগরের গল্প নিয়ে ‘হাওয়া

প্রকাশ: জুলাই ১৮, ২০২২

কর্মজীবনের লম্বা সময়ে নির্মাণ করেছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপন। সম্প্রতি সেন্সরের চৌকাঠ পার হয়েছে নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হাওয়া গত মাসে হাওয়ার ট্রেলার প্রকাশিত হলে তা দ্রুতই সিনেমাপ্রেমীদের নজর কাড়ে। সিনেমার গল্পটি নতুন ধরনের হতে যাচ্ছে বলে সবার অনুমান। চলতি মাসের শেষ দিকে মুক্তি পেতে চলেছে সিনেমাটি। হাওয়া নিজের নির্মাতা জীবনের গল্প শুনিয়েছেন সুমন। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সাবিহা জামান শশী

সিনেমাটার নাম হাওয়া কেন?

আমার কাছে নামের ব্যাপারটা হচ্ছে পুরো সিনেমার আপাত অনুভূতি। যে অনুভূতি আমরা দেখাতে চেয়েছি। জনরা হিসেবে হাওয়া একটা মিস্ট্রি ড্রামা। দর্শক যখন সিনেমাটা পর্দায় দেখবেন সে সময়ে একটা বোধ, রহস্য কিংবা কালের রূপকথাসব ছাপিয়ে একটা অনুভূতির দোলা অনুভব করবেন। কাজ করতে গিয়ে যেটা আমরা বুঝতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে হাওয়া। অনেক সময় আক্ষরিক অর্থে সিনেমার একটা নাম হয় আর তার ওপর নির্ভর করে গল্প। কিংবা কোনো একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিনেমার নাম দেয়া হয়। আমার সিনেমায় নামকরণের সার্থকতার বিষয়টা বিশ্বাস করিনি। অনেকভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করা যায়। বহুদিন সিনেমা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে সিনেমাটার নাম হাওয়া। হাওয়া সম্পর্কে যে উষ্ণতা, যে শীতলতা সব মিলিয়েই সিনেমাটার নাম হাওয়া।

সিনেমার শুটিং হয়েছে গভীর সমুদ্রে। কোন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছিল?

সত্যি বলতে সব কাজেই প্রতিকূলতা থাকে। আর গভীর সমুদ্রে সিনেমার শুটিং করাটা চ্যালেঞ্জিং। কাজ শুরু করার সময়েও আমি জানতাম না সিনেমাটা শেষ করতে পারব কিনা। সিনেমার শুটিং শুরু করার পর কাজ থেমে যেতে পারে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে হাওয়ার কাজ করেছি। সমুদ্রে নিয়ে দু-তিন বছরের পর্যবেক্ষণের পর আমি মাঠে নেমেছি। আমি জানতাম সমুদ্র কখন কীভাবে নিজেকে বদলায়। কোন সময় আবহাওয়া শান্ত, কখন শুটিং করলে ভালো হয়, কোন মাসে গেলে শুটিং ঠিকমতো করা যাবে। এমনকি কোন দুই মাস সমুদ্রের পানি সবচেয়ে ঠাণ্ডা থাকে। এসব বিষয় গবেষণা করার পর আমরা পুরোদমে কাজে নেমেছি।

সিনেমার গল্প কি তাহলে অনেকটাই সমুদ্রনির্ভর?

হাওয়ায় শুধু মিনিট মাটি দেখতে পাবেন দর্শক। ওইটুকু সময় ছাড়া ১৩০ মিনিটের বাকি ১২৭ মিনিট দর্শক সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলবেন। আমরা একটা কোলাজ সিনের মধ্য দিয়ে গল্পটা শুরু করেছি। মূলত নৌকার ঘাট ছিল সেটা। এছাড়া পুরো গল্পটা একটা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে। সম্পূর্ণ শুটিং করা হয়েছে গভীর সমুদ্রে। সারা বিশ্বেই সমুদ্রের শুটিং করা হয়েছে গ্রিন স্ক্রিনে। ভারতেও গভীর সমুদ্রে শুটিং করা কোনো সিনেমা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এর মানে এই নয় যে বিষয়টি নিয়ে গর্ব করছি। প্রথম হওয়াটা খুব বেশি সমীচীন নয় আমার কাছে। আমরা ভাবি প্রথম মানেই অনেক কিছু, তবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় প্রথম হয়ে ভালো না করা ব্যাপারটা আরো দুঃখজনক। আমি জানি না এরপর আর সিনেমা নির্মাণ করব কিনা, তবে হাওয়া খুব ভালো একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়তো সিনেমা বানাব, তবে সেটা তো আর সমুদ্রের গল্প হবে না।

হাওয়ার গল্প নিয়ে শুনতে চাই...

আমরা একটা বদ্বীপের মানুষ। আমাদের বঙ্গোপসাগরের গল্প হাওয়া। আমরা বিভিন্ন দেশের সাগরের সিনেমা দেখেছি। কিন্তু এটা আমার বঙ্গোপসাগরের সিনেমা। যদিও সমুদ্রতীরবর্তী কয়েকজন মানুষের মাঝ সমুদ্রের গল্প দেখানো হয়েছে এতে। এখানে বিচ্ছিন্নতার চিত্র আমরা দেখতে পাই, যেটা এক ধরনের একাকিত্ব তৈরি করে। বিষণ্নতার মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়েছে।

বিজ্ঞাপন, নাটক, ওয়েব ফিল্ম, সিনেমায় সম্পৃক্ত আছেন। ব্যক্তিগতভাবে কি কোনোটার প্রতি আলাদা ভালো লাগা রয়েছে?

চারুকলা থেকে বের হওয়ার পর আমি অল্প কয়েকটা ফিকশন বানিয়েছিলাম। এরপর আমি বিজ্ঞাপনে চলে যাই। আমি টেলিভিশনে কাজ করতে চাই না। চার বছর টেলিভিশনে কাজ করেছি এবং সেটা অনেক আগে। আমার ক্যারিয়ারের লম্বা সময়জুড়েই বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। টেলিভিশন দিয়ে মানুষ আমাকে চিনতে পেরেছে, তবু কিছু কাজ করার পর আর ইচ্ছা হয়নি। টেলিভিশনে কাজ করতে আমার খুব ভয়ংকর লেগেছে। কারণ এখানে অনেক কম সময়ে কাজ করতে হয়। আমি যে গল্পটা বলতে চাই সেটা বলার জায়গা না এটা। আমার মনে হতো অল্প সময় আর বাজেটে গল্পগুলো বলতে গেলে যেটা বলতে চাই সেটা বলতে পারব না। এটা ভেবে টেলিভিশন থেকে সরে আসা। একটা সময়ে সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবলাম। ওটিটিতে কাজ করছি। আমি খুব বেশি কাজ করিনি, আরো কাজ করার পর বলতে পারব কোনটায় আলাদা ভালো লাগা রয়েছে। আমার সিনেমা নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে, যদিও এটা শুরু মাত্র।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫