জাপানে প্রকৌশলী সংকট

সেমিকন্ডাক্টর খাত পুনরুদ্ধারে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশয়

প্রকাশ: জুন ২৮, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপ উৎপাদন খাত পুনরুজ্জীবিত করতে জাপান সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে প্রকৌশলীদের সংকটে সেটি ব্যাহত হতে পারে। সম্প্রতি দেশটির সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী তোশিবা, সনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সতর্ক বার্তা দিয়েছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস নিউজলেইনস।

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরবরাহ চেইনে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে দেশের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। আর ঠিক সে সময়েই দেশটিতে প্রকৌশলীদের সংকট দেখা দিয়েছে।

গত মাসের জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি আবেদন দাখিল করে দেশটির বৈদু্যুতিক পণ্য উৎপাদন শিল্পসংশ্লিষ্টদের একটি দল। তারা জানায়, বছরের পর বছর বিশ্বেবাজার হিস্যা হারানোর পর জাপানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প পুনরুদ্ধারের জন্য সবশেষ বড় সুযোগ ২০৩০ সাল।

জাপানের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (জেইআইটিএ) জানায়, চিপ উৎপাদন খাতের সফলতা মূলত উৎপাদন কারখানা পরিচালনায় মেধাবীদের নিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। এক পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানায়, বিনিয়োগ কার্যক্রম গতিশীল রাখতে আগামী ১০ বছরে আটটি বড় প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজারের বেশি প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে হবে। টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের অধ্যাপক এবং জেইআইটিএ বোর্ডের নীতিমালা প্রস্তাবনা টাস্কফোর্সের প্রধান হিদেকি ওয়াকাবায়াশি বলেন, প্রায়ই বলা হয় সেমিকন্ডাক্টরের সংকট রয়েছে। কিন্তু আসলে প্রকৌশলীদের সংকটই মুখ্য।

১৯৮০ সালের শেষের দিকে জাপানের সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেশ বড় বিনিয়োগ করে। এর মাধ্যমে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্ববাজারের অর্ধেকেরও বেশি দখলে নেয়। কিন্তু ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের পর দেশটি দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এমনকি চীনের কাছেও তাদের অবস্থান হারায়। পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা তৈরি হয় সে সময় অধিকাংশ প্রকৌশলীদের অব্যাহতি দেয়া হয়। ওয়াকাবায়াশি বলেন, ঠিক কারণেই বর্তমানে দেশে অভিজ্ঞ প্রবীণ কোনো প্রকৌশলী নেই।

ফ্ল্যাশ মেমোরি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিওক্সিয়ার ম্যানেজার টয়োকি মিতসুই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে পড়াশোনা করছে তারা কর্মক্ষেত্র হিসেবে আর্থিক বা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিচ্ছে। কেননা চিপ উৎপাদন খাত তার আগের জৌলুস হারিয়েছে। উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতে এবং দক্ষ কর্মী তৈরিতে তোশিবা, সনি অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি চিপসংক্রান্ত গবেষণা এর উৎপাদনে কর্মী নিয়োগে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত চিপ তৈরিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে জাপানের কিয়ুশুর দক্ষিণ দ্বীপে ৮৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি কারখানা স্থাপনে সনির সঙ্গে কাজ করছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) কারখানার জন্য হাজার ৭০০ কর্মী নিয়োগের বিষয়েও জানিয়েছে। এতে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আরো বেশকিছু কারখানা স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। কিওক্সিয়া তাদের জয়েন্ট ভেঞ্চার সহযোগী ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের সঙ্গে ট্রিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ে জাপানের মূল ভূখণ্ডে আগামী বসন্তে কারখানা চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে। পাশপাশি আরো ট্রিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ে উত্তর জাপানে আরো একটি কারখানাও স্থাপন করা হবে। আগামী বছর এটির নির্মাণ সম্পন্ন হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫