বিএম কনটেইনার ডিপো

দুর্ঘটনার দিন টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছিলেন শ্রমিকরা

প্রকাশ: জুন ০৯, ২০২২

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণ অগ্নিকাণ্ডের পর এটি পরিচালনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে। ডিপোয় রাসায়নিকভর্তি কনটেইনার রাখার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল কিনা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল এসব প্রশ্ন তো উঠছেই। এবার সেখানে শ্রমিকদের কখনো কখনো টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করানো হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের প্রতিটি পালার সময়সীমা ছিল ১২ ঘণ্টা। দুর্ঘটনার দিনও শ্রমিকরা টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক শ্রমিক বণিক বার্তাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শ্রমিকরা জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোয় শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টা হিসেবে কাজ করতে হতো। তবে যেদিন শিফট বা পালা পরিবর্তন হতো, সেদিন টানা ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হতো। দুর্ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ রোববার শিফট পরিবর্তনজনিত কারণে শনিবার একটানা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন শ্রমিকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারী যানবাহন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পরিবহন শ্রমিকদের এভাবে টানা দায়িত্ব পালন করা ঝুঁকিপূর্ণ।

চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন বিএম কনটেইনার ডিপোর প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক আমিনুল ইসলাম গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, শনিবার টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করার পর দিনের শিফটের কর্মীরা রাতের শিফটে যায়। শিফট পরিবর্তনের সময় অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম দেয় ডিপো কর্তৃপক্ষ। টানা কাজ করার কারণে প্রথম প্রথম সমস্যা হলেও বাড়তি আয়ের জন্য সবাই বিষয়টি মেনে নেয়। ফলে প্রতি সপ্তাহের জন্য এটিই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএম ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত আইসিডিতে কাজ করতেন ১২০ জন চালক, যারা ভারী যানবাহন পরিচালনা করতেন। তাদের সহকারী হিসেবে ছিলেন আরো ৭০-৮০ জন। এছাড়া ডিপোয় ৫০০-এর বেশি নিয়মিত অনিয়মিত শ্রমিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আইসিডিগুলোতে রাতের শিফটে সবচেয়ে বেশি কাজ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা। শিফট পরিবর্তনকালে সারা রাত নির্ঘুম থেকে পরদিন ভারী কনটেইনার পরিবহনে ট্রেইলার চালনা অনেক কষ্টের বলেও মন্তব্য করেন তারা।

গতকাল দুপুরে বিএম ডিপো এলাকায় কথা হয় স্থানীয় সাপ্লায়ার মো. সাইফুল আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ডিপোয় সবচেয়ে বেশি কাজ হয় রাতে। মূলত বন্দর বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে পণ্য নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়ার সময়ই কাজের তত্পরতা বাড়ে। শনিবার শিফট পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের টানা দুই শিফটে কাজ করতে হয়। দুর্ঘটনার রাতেও টানা কাজ করছিলেন শ্রমিকরা।

হাসপাতালের চিকিৎসাধীন একাধিক শ্রমিক ট্রেইলার চালক জানিয়েছেন, ওভারটাইমের কারণেই মূলত টানা ২৪ ঘণ্টা কাজের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন তারা। সংগঠনের পক্ষ থেকে টানা দুই শিফট কাজ করার নিয়ম বাতিলের দাবিতে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করলেও সেটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সেলিম খান বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোয় কর্মরত ভারী যানবাহন চালকরা আমাদের সংগঠনের সদস্য। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে বন্দর কিংবা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে কনটেইনার পরিবহন করে আমাদের সদস্যরা বিএম ডিপোতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ঘণ্টা ডিউটি বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। কিন্তু তাতে কোনো ফলাফল আসেনি। শিফট পরিবর্তনের সময় একটানা দুই শিফটে কাজ করার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন নিয়মটি চালু রেখেছে। শ্রমিক নেতা মনে করেন, এটি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ।

তবে ২৪ ঘণ্টা কাজের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেডের মূল প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, কোনো মানুষই টানা ২৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে কাজ করতে পারে না। তাছাড়া বিএম কনটেইনার ডিপো পরিচালনা-সংক্রান্ত সব তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়ে সব ধরনের চুক্তিপত্র তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারব।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫