বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নষ্ট করছে স্বাস্থ্যকর ঘুম

প্রকাশ: মে ২২, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

সুস্থ জীবনের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। দিনশেষে দৈহিক মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম দুশ্চিন্তা কমায়, বাড়ায় স্মৃতিশক্তি এবং দূরে রাখে অসুখও। তবে নতুন একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্যকর ঘুম নষ্ট করছে। ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা রাতের তাপমাত্রা দিনের চেয়েও দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্লেষণটিতে দেখা গিয়েছে, এরই মধ্যে বিশ্বের মানুষ প্রতি বছর গড়ে ৪৪ ঘণ্টা ঘুম হারাচ্ছে। তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান থাকায় ঘুম নষ্ট হওয়ার সময় আরো বাড়তে চলেছে। পাশাপাশি এটি কিছু গোষ্ঠীকে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতি ডিগ্রি উষ্ণায়নে নারীদের ঘুমের ক্ষতি পুরুষদের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেশি। হার ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য দ্বিগুণ এবং স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য তিন গুণ বেশি। সমীক্ষায় গবেষকরা স্লিপ-ট্র্যাকিং হাতঘড়ি থেকে ডাটা ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে ৬৮টি দেশের ৪৭ হাজার মানুষের ৭০ লাখ রাতের বেশি ঘুমের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ঘুম নিয়ে এটিই -যাবত্কালের সবচেয়ে বড় গবেষণা।

এর আগের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এর মধ্যে রয়েছে হার্ট অ্যাটাক, আত্মহত্যা, মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট, দুর্ঘটনা আঘাত। পাশাপাশি এটি মানুষের কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।

খারাপ ঘুমের ক্ষেত্রেও প্রভাবগুলো দেখানো হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, তাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে উচ্চতাপমাত্রা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। কারণেই স্বাস্থ্যগত জটিলতাগুলো সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো মানুষের মধ্যে রাতের উষ্ণতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেয়া ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেল্টন মাইনর বলেন, আমাদের প্রায় সবার জন্যই দৈনন্দিন রুটিনের একটি খুব পরিচিত অংশ ঘুম। আমরা আমাদের জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটাই। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের ক্রমবর্ধমানসংখ্যক মানুষ পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারছে না। গবেষণায় আমরা প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক স্কেলে প্রমাণ সরবরাহ করেছি যে গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি উষ্ণতা মানুষের ঘুম নষ্ট করে। প্রমাণ আসলে বড় একটি আইসবার্গের ক্ষুদ্র চূড়ামাত্র। কারণ খুব সম্ভবত আমাদের ফলাফল রক্ষণশীল।

কেল্টন মাইনর বলেন, উচ্চতাপমাত্রা বিপুলসংখ্যক মানুষের রাতের ঘুম নষ্ট করছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ১০ লাখ মানুষের একটি শহরে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে অতিরিক্ত ৪৬ হাজার মানুষ কম ঘুমায়। আপনি যদি ভারত পাকিস্তানে মুহূর্তে প্রবাহিত তাপপ্রবাহের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন লাখ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ভুগছে।

ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত ঘুম আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, উচ্চতর তাপমাত্রা ঘুমের সূচনাকে বিলম্ব করছে। ফলে কমে যাচ্ছে ঘুমের সময়। পাশাপাশি ঘুমিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীর শীতল হওয়া প্রয়োজন। তবে উচ্চতাপমাত্রা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। এক্ষেত্রে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ তাদের শরীর সাধারণত পুরুষদের তুলনায় দ্রুত ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু ঘরের তাপমাত্রা বেশি হলে শরীর ঠাণ্ডা হওয়ার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে। আবার বয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া আরো জটিল করে তোলে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক বেশি ঘুম হারাতে পারে। কারণ তাদের মধ্যে ফ্যান এয়ারকন্ডিশনারের মতো শীতলীকরণ যন্ত্রগুলোর অভাব রয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫