ডিবিএম-এর প্রাক-বাজেট সংলাপে বক্তারা

জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা উপেক্ষিতই থাকছে

প্রকাশ: মে ২১, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যখাতে প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে জাতীয় বাজেটে খুব একটা প্রাধান্য নেই। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দাতাদের নির্দেশিত উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রভাব থাকায় স্বাস্থ্যের মতো সেবা খাতগুলো বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। সেবা খাতগুলোয় বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে না। দেশের স্বাস্থ্য খাতকে বেসরকারীকরণের মাধ্যমে পণ্যে পরিণত করা বন্ধের বিকল্প নেই।

গতকাল ২০ মে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন আয়োজিত লালমাটিয়ায় নাগরিক উদ্যোগের কনফারেন্স হলে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াতের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত: পরিপ্রেক্ষিত জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এ আলোচনায়  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএইচএমের সমন্বয়কারী আমিনুর রসুল বাবুল।

সান ইয়াত বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে রোগীর নিজস্ব অর্থ খরচ সবচেয়ে বেশি এবং খরচ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ২৩ শতাংশ বহন করে সরকার, ১৯৯৭ সালে সরকারের অংশ ছিল ৩৭ শতাংশ। বেসরকারি এনজিও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো শতাংশ এবং দাতা সংস্থাগুলো শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বহন করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ২৭ ডলার। এটি বিশ্বে সর্বনিম্ন। যেখানে ভারতে ৬১ ডলার মালয়েশিয়ায় ৪১০ ডলার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য খাতে ব্যয় হওয়া আবশ্যিক ৪০ ডলার। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ২৩ শতাংশ, ভারতে ৩৩ নেপালে ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যয় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬৩ শতাংশ, ভারতে ৫৭ দশমিক নেপালে ৪৯ দশমিক শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, একটি ভালোমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটে টাকার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়লেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুপাতে নয়। বাংলাদেশের গত বছরগুলোর স্বাস্থ্য খাতের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এটি জাতীয় বাজেটের শতাংশের বেশি নয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তা জাতীয় বাজেটের দশমিক ১৫ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিয়ে যেতে আটটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের অসমতা দূর, অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা প্রয়োজনের ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ, সারা দেশে দক্ষ চিকিৎসক এবং অধিক সংখ্যক নার্স তৈরি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং তাদের চাহিদাসমূহের ওপর ভিত্তি করে তাদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, জাতীয় নীতিসমূহে, যা স্বাস্থ্যসেবাকে ব্যক্তিমালিকানাধীন করে পণ্যে পরিণত করা বন্ধ করতে হবে, সকলের জন্য সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবীমা চালু, জাতীয় স্বাস্থ্য ঔষধ নীতি গ্রহণ এর বাস্তবায়ন এবং ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।

আলোচনায় অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক গোলাম মোস্তফা দুলাল, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক সেকেন্দার আলী মিনা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫